Latest News

পুজোর ডায়েট টিপস, ভালোমন্দ খেয়েও ওজন বাড়বে না

রাখী চট্টোপাধ্যায় 

সামনেই বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। কিন্তু এবারও পরিস্থিতির চাপে সবটাই কেমন অন্যরকম। করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় জর্জরিত গোটা পৃথিবী। তবুও পুজোর এই কয়েকটা দিন সমস্ত নেগেটিভিটিকে ভুলে ভালো থাকার সময়।  কিন্তু এবছরও আনন্দ হোক বাড়িতে থেকেই। শুধু নিজের জন্য নয়, গোটা পরিবারের জন্যও এইটুকু সতর্কতা মেনে চলা দরকার। প্রতিবছর তো প্যান্ডেল হপিংয়েই পুজো কাটে, এবার নাহয় বাড়িতে থেকে পরিবারের সঙ্গে ভালো খাওয়াদাওয়া করে কাটুক।
যারা সারাবছর নিজেদের মেনটেন করতে ডায়েটিং করেন খাওয়াদাওয়ার নাম শুনেই কি চোখের সামনে ওজন মেশিন বা গ্লুকোমিটার ভেসে উঠছে?
তাহলে সরিয়ে ফেলুন এই ভাবনা। ডায়েটিং মানেই কিন্তু সব খাওয়া ছেড়ে দেওয়া নয়। বরং সবকিছু খেয়েও নিজেকে সুস্থ আর ফিট রাখার পদ্ধতিই হল ডায়েটিং। ভাবছেন তো, কী সেই উপায় যা দিয়ে ওজনও বাড়বেনা, আবার একটু ভালোমন্দ খেতেও পারবেন? একটু বুদ্ধি করে মেনে চলুন কয়েকটা বিষয়।
আসুন জেনে নিই এমন কিছু টিপস যার সাহায্যে পুজোর দিনগুলোতে খুশি রাখতে পারবেন শরীর মন দুটোকেই…১. পুজোর ৪ দিন ভালোমন্দ খাওয়ার সাথেই চলুক দৈনন্দিন শরীরচর্চাও। সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্তত আধঘণ্টা যোগাসন, ফ্রি হ্যান্ড ব্যয়াম প্রাণায়াম ও মেডিটেশন করুন। মনে রাখবেন শরীরচর্চা কিন্তু আপনার ভালো থাকার অন্যতম মাধ্যম। চেষ্টা করুন নিজের পছন্দের মিউজিকের সাথে শরীরচর্চা অভ্যাস করতে, তাতে ভালো থাকবে আপনার মনও।
২. পুজোর চারদিন হোক হরেক রকম রান্না, শুধু বাদ থাকুক কোনও ডিপ ফ্রায়েড খাবার। আর যেকোনও খাবারের সাথে থাকুক স্যালাড।৩. দুপুরে খেতে পারেন চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ি ও পাঁচমেশালি তরকারি। এর সঙ্গে যদি থাকে একদম অল্প তেলে ভাজা অমলেট বা ডিম ভুজিয়া তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
৪. প্রতিদিন ডায়েটে থাকুক টক দই, তা খেতে পারেন লস্যি হিসাবে বা রায়তা হিসাবেও।
৫..প্রতিদিন খান যেকোনও একটা মরশুমি ফল। বাড়ির সবার জন্য বানিয়ে ফেলুন ‘টেস্টি ফ্রুট স্মুদি’ আর সেটা পরিবেশন করুন সুন্দর গ্লাসে সাজিয়ে। ব্যাস, পেট ও মন ২টোই খুশি।
৬. যারা চাইনিজ খেতে ভালোবাসেন ডিম বা সয়াবিনের সঙ্গে সব সবজি দিয়ে বানিয়ে ফেলুন চাউমিন, তবে অবশ্যই আজিনামটো ছাড়া।৭. অষ্টমীর দিন বেশিরভাগ বাড়িতেই লুচি হয়ে থাকে। কোনও অসুবিধা নেই তাতে। শুধু লুচি করুন রিফাইন্ড তেলে আটা ও ময়দা ১:১ অনুপাতে মিশিয়ে।৮. নবমীর দিন সাধারণত মাংস খাওয়া হয় বাড়িতে। মনে রাখবেন মাটন কিন্তু কোনওভাবেই হৃদয়ের বন্ধু নয় তাই চিকেন খাওয়াই ভালো। চেষ্টা করুন মাংস রান্নায় টক দই ব্যবহার করতে।
৯. একদিনের বেঁচে যাওয়া তেল কখনওই পরেরদিন খাবেন না। শুরুতেই তেলের ব্যবহার থাকুক সীমিত।
১০. অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন শুধুমাত্র স্যালাড ড্রেসিং-এর ক্ষেত্রেই। খুব দরকার হলে কন্টিনেন্টাল ডিশের ক্ষেত্রে। ইন্ডিয়ান খাবারের জন্য কখনোই নয়।
১১. পায়েসের ক্ষেত্রে চাল বা সিমাইয়ের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন সয়াবিন (নিউট্রেলা পেস্ট)। এতে পায়েসের গ্লাইসেমিক লোড ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ২টোই কম হবে। ডায়াবেটিক পেশেন্টদের জন্য এই পায়েস পরম বন্ধু
১২. ডায়াবেটিক পেশেন্টরা দশমীতে মিষ্টি হিসাবে খেতে পারেন রসগোল্লা, কিন্তু পরিমিতভাবে। আর অন্যান্য কার্বহাইড্রেটও যেন সেদিন নিয়ন্ত্রণে থাকে।১৩. যারা বিভিন্ন কারণে উপবাস করেন পুজোর এই কদিনে তাদের জন্য বলব কোনওভাবেই পেট খালি রাখবেন না। দইয়ের ঘোল, ফলের রস বা গোটা ফল, ড্রাই ফ্রুট এগুলো কিন্তু খাওয়াই যায়। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিক তাদের উপবাসের দিনে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার খুব সম্ভাবনা থাকে। আলসার রোগীদের ক্ষেত্রে ARS, পেটে ব্যাথা, বমিভাব এগুলোও হতে পারে।১৪. পরিবারের সকলে মিলে আয়োজন করতে পারেন কোনও ঘরোয়া অনুষ্ঠানের। এর মধ্যে দিয়ে নিজেদের পুরোনো সৃজনশীল অভ্যাসগুলো ফিরে আসবে আবার।
১৫. সবশেষে আবারও বলি বাইরে বেরোবেন না। এতদিন ধরে ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ এদের লড়াইকে বিফলে যেতে দেবেন না। পুজো প্রতি বছর আসবে, কিন্তু জীবন একটাই, তাকে ভালোবাসুন।
ভালো থাকার রিমোট কিন্তু আপনার হাতেই, তাই তাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করুন। ভালো থাকুন, পজেটিভ থাকুন।

লেখিকা হাওড়ার নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের সিনিয়ার ডায়েটিশিয়ান

 

মন ভালো রাখতে ঘরেই বানান অনন্য স্বাদের ডার্ক চকলেট

You might also like