
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কোথায় চিনের জে-২০ ফাইটার জেট, আর কোথায় রাফাল। শক্তিতে আর প্রযুক্তিতে চিনের যুদ্ধবিমান রাফালের ধারেকাছেই আসবে না। ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তি ও কৌশলগত পদক্ষেপ চিনের থেকে শতগুণে ভাল। ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক মহলও। রাফাল সেখানে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে আসছে। চিন যদি এরপরেও বাড়াবাড়ির চেষ্টা করে তাহলে ভারতও তার শক্তি দেখিয়ে দেবে, সাফ জানিয়ে দিলেন প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান বিএস ধানোয়া।
চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের আবহেই পাঁচটি রাফাল চলে আসছে ভারতের হাতে। গত সোমবার ফ্রান্সের মেরিনিয়াক থেকে আকাশে ডানা মেলেছে পাঁচটি রাফাল যুদ্ধবিমান। আজ, বুধবারই হরিয়ানার আম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ল্যান্ড করবে। ‘গোল্ডেন অ্যারো’ (১৭) স্কোয়াড্রনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে পাঁচ রাফালকে। কাউন্টডাউন শুরু হয়েছিল সেই রবিবার সন্ধে থেকেই। এখন আম্বালা এয়ারবেসে সাজো সাজো রব। রাফাল ও ফ্রান্স থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা বায়ুসেনার পাইলটদের স্বাগত জানাতে অধীর অপেক্ষা চলছে।
ধানোয়া বলেছেন, তিব্বত ও আকসাই চিনে নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে চিন। পূর্ব লাদাখ থেকে সেনা সরানোর ঝুটো নাটক করে, তিব্বতে সেনা বাড়াতে শুরু করেছে। তাতে লাভ বিশেষ হবে না। ধানোয়ার কথায়, চিনের এয়ার ডিফেন্সের শক্তি তো শুধু সারফেস থেকে এয়ারে অর্থাৎ আকাশ থেকে ভূমিতে মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তিই তাদের বেশি। ভারত সেখানে কয়েকধাপ এগিয়ে। সারফেস-টু-এয়ার, এয়ার-টু-এয়ার এমনকি এয়ার-টু-সারফেসে মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তি ভারতীয় বায়ুসেনার মুঠোয়। রাফাল সেখানে দূরপাল্লার দুই ক্ষেপণাস্ত্রযুক্ত হয়েই আসছে। একদিকে ‘বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ মিসাইল’ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল মেটিওর যা প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁত টার্গেট করতে পারে। অন্যদিকে, লো-অবজার্ভর ক্রুজ মিসাইল ‘স্কাল্প’ যা ৬০০ কিলোমিটার পাল্লা অবধি লক্ষ্যে টার্গেট করতে পারে। প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধানের কথায়, রাফাল হাতে চলে এলে ভারতীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আরও মজবুত হবে। প্রতিপক্ষের শক্তিকে প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে ভারতীয় বাহিনী।
আরও পড়ুন: ভারতে আসার পথে মাঝ আকাশেই জ্বালানি ভরল রাফাল যুদ্ধবিমান, ছবি প্রকাশ বায়ুসেনার
২০১৯ সালের বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের নিখুঁত পরিকল্পনা ছিল ধানোয়ারই। বলেছেন, চিনের জে-২০ চেংড়ু ফাইটার জেট হল পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। পিপলস লিবারেশন আর্মির জন্য এই শক্তিশালী ফাইটার জেট বানানো হয়েছে। কিন্তু শক্তিতে ভারতও কম যায় না। রাফাল ফাইটার জেট, সুখোই-৩০ এমকেআই মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট চিনের যুদ্ধবিমানের মুখোমুখি মোকাবিলা করতে পারে।
ধানোয়ার কথায়, “চিনের অস্ত্রশস্ত্র যদি এতই উন্নত হবে তাহলে তাদের বন্ধু পাকিস্তান কেন এখনও এফ-১৭ ফাইটার জেট ব্যবহার করে। আদৌ কি চিনের তৈরি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান আকাশযুদ্ধের জন্য অতটাও শক্তিশালী! পাকিস্তান এখনও পুরনো আমলের সুইডিশ এয়ার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, চিনের তৈরি জেফ-১৭ ফাইটার জেট তাদের হাতে থাকলেও সেখানে ইউরোপিয়ান রেডার ও তুরস্কের বানানো টার্গেটিং পড লাগানো আছে। চিনের প্রযুক্তি যদি এতই উন্নত হবে তাহলে পুরনো আমলের ডিভাইস ব্যবহার করার দরকার পড়ত কি পাকিস্তানের, এটাও ভাবনার বিষয়।” ধানোয়ার বক্তব্য, চিনের শুধু আস্ফালন আছে, আদতে শক্তিতে তারা ভারতের থেকে অনেক পিছিয়ে।
দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য কায়েম করতে চায় চিনা বাহিনী, অথচ রাশিয়ার তৈরি সুখোই-৩০ ও সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে রেখেছে। সেখানে তাদের শক্তিশালী ফাইটার জেট কোথায়? প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান। তাঁর বক্তব্য, রাশিয়ার প্রযুক্তিতেই সামান্য বদল করে নিজেদের যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করছে চিন। তাদের বেশিরভাগ যুদ্ধবিমানই সুখোইয়ের ধাঁচে তৈরি। ভারত সেখানে নিজের প্রযুক্তিতে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। রাশিয়ার সুখোই এলেও তার থেকে সুপারসনিক ব্রাহ্মস মিসাইল নিক্ষেপের প্রযুক্তি ভারতের নিজস্ব। চিন সেখানে কোনওভাবেই ভারতীয় বায়ুসেনার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না।