
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মোবাইলের কলার টিউনের কাশির যান্ত্রিক শব্দ থেমে গেল। কিন্তু ওপ্রান্তে ফোন ধরেছেন যিনি তাঁর কাশি কিছুতেই থামে না। কোনও রকমে সামলে নিতে হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন, ‘কাল থেকে এই অবস্থা চলছে। টেস্ট করতে দিয়েছি। জ্বরজারি হলে তোমরাও টেস্ট করিয়ে নাও’, এই বলে ফোন ছেড়ে দিলেন ভদ্রলোক।
ফোনের ওপ্রান্ত থেকে অনেককেই এমন কথা শুনতে হচ্ছে। ওষুধের দোকানে, পথেঘাটে আলোচনা, কোন বাড়ির কে আক্রান্ত। ফোনে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবরা কে কেমন আছে।
হুগলির চন্দননগরের ফটকগোড়া এলাকার বাসিন্দা, অসিত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাদা-বৌদি থাকেন পুণেতে। মেয়ের কাছে। খোঁজ নেওয়ার জন্য ফোন করেছিলেন। পুণে থেকে ভাইঝি জানালেন, সবার জ্বর। টেস্ট করতে দিয়েছেন। উপসর্গ রয়েছে।
ভাইঝিকে অসিতবাবু জানালেন, তিনি, তাঁর স্ত্রী রেণুকা চট্টোপাধ্যায়, ছেলে—সবারই একই সিম্পটম। তাঁরাও টেস্ট করতে দিয়েছেন।
ব্যারাকপুরের নোনা চন্দনপুকুর এলাকার বাসিন্দা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মানব লাহিড়ীদের বাড়ির সকলেই জ্বর, গা-হাত-পা ব্যথা নিয়ে রয়েছেন। মেয়ে সরকারি কর্মচারী। কোচবিহারে কর্মরত। মেয়েও গত তিন দিন ধরে হোম আইসোলেশনে।
ঘরে ঘরে এক ছবি। একে অন্যের খোঁজ নিচ্ছেন। ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসছে উপসর্গের কথা। এদিক থেকেও জানানো হচ্ছে—একই জিনিস। এমনটা বোধহয় কোভিডের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, ওমিক্রন মারাত্মক সংক্রামক। দেখা যাচ্ছে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ কার্যত ঘরে ঘরে আছড়ে পড়ছে। পাড়ায় পাড়ায় ঘরে ঘরে জ্বর, গা-হাত-পা ব্যথা, সর্দি-কাশির উপসর্গ।
গত দু’দিন, তিন দিন ধরে টেস্টের পরিমাণও ব্যাপক বেড়েছে। বেসরকারি ল্যাবগুলি জানিয়েই দিচ্ছে, ৭২ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট পাওয়া মুশকিল। লালপ্যাথ ল্যাবের হুগলির ভদ্রেশ্বর শাখার কর্ণধার সৃজন সরকার বলেন, “যাঁরা বিমান ধরার জন্য টেস্ট করাতে চাইছেন, তাঁদের না করে দিচ্ছি। কারণ ৭২ ঘণ্টার আগে রিপোর্ট দিতে পারব না। সোমবার থেকে এই চাপটা বেড়ে গিয়েছে।”
ফলে যাঁরা বিমান ধরবেন তাঁদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। মধ্যমগ্রামের একটি বিলাসবহুল আবাসনের বাসিন্দা, পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৈকত ভট্টাচার্য জানান, শুক্রবার তাঁর মুম্বই যাওয়ার বিমান ধরার কথা। আজ তিনি স্যাম্পল দিয়েছেন। কিন্তু এখনও অনিশ্চিত শুক্রবার সকালের মধ্যে রিপোর্ট আসবে কি না।
মৃত্যুহার কম হলেও চিকিৎসকদের চেম্বারে ভিড় উপচে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গ শুনেই টেস্ট রিপোর্ট দেখার আগেই চিকিৎসকরা কোভিডের ওষুধ চালু করে দিচ্ছেন। অ্যাজিথ্রোমাইসিন, জিঙ্ককোভিড, মনটেক এলসি—কার্যত ঘরে ঘরে সাজানো রয়েছে টেবিলে।