
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নতুন চাকরির আনন্দে মশগুল ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাসিন্দা রেণু খাতুন। আচমকা কী থেকে কী হয়ে গেল, দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেন না তিনি। ডানহাতের কব্জি থেকে নীচের অংশ কুপিয়ে কেটে নিল স্বামী (Nurse Attack)! এখন প্রশ্ন অনেক। কাটা হাত কি জোড়া যাবে আর? নাকি আজীবনের মতো পঙ্গুত্বই ভবিষ্যৎ! আর পরিশ্রম করে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাওয়া চাকরিরই বা কী হবে। সে চাকরি কি আর করতে পারবেন তিনি?
এই সব প্রশ্ন আর অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে আপাতত দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে রেণুর। গত সপ্তাহ পর্যন্ত এই হাসপাতালেই নার্স হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সম্প্রতি সরকারি চাকরি পাওয়ার পর শনিবার ইস্তফা দিয়েছেন। কে জানত, ওই দিন রাতেই রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরতে হবে এই হাসপাতালেই!
রেণুর পরিবার সূত্রের খবর, তিনি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। চাইতেন নার্স হবেন। সেই নিয়েই পড়েছিলেন। ২০১৭ সালে তাঁর বিয়ে হয় কেতুগ্রামের মুদি দোকানদার সরিফুল শেখের সঙ্গে। তার পর থেকে দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করতেন তিনি। দিন কয়েক আগে তিনি সরকারি নার্সের চাকরও পান। পরিবারের দাবি, এর পরেই রেণুর স্বামী সরিফুলের কয়েক জন বন্ধু তার মাথায় কুবুদ্ধি ঢোকায়, স্ত্রী চাকরি পেলে আর ঘরে থাকবে না।
অভিযোগ, এর পরই বন্ধুদের সঙ্গে সরিফুল পরিকল্পনা করেন রেণুর হাত কেটে নেওয়ার, যাতে তিনি আর চাকরি করতে না পারেন। শনিবার রাতে রেণু যখন ঘুমোচ্ছিলেন, তখন দু’জন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রেণুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁর ডান হাত কব্জি থেকে কেটে ফেলে সরিফুল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ডান হাতের উপরে বারবার আঘাত করায় ডান হাত কেটে আলাদা হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ওই হাত যাতে জোড়া না যায়, তাই কব্জির নীচ থেকে কাটা অংশটি লুকিয়েও রাখে সরিফুল।

সেই কাটা হাত শেষেশ উদ্ধার করা গিয়েছে। হাসপাতালে রয়েছে সেটি। কিন্তু চিকিৎসকদের বক্তব্য, ঘটনার পরে কেটে গেছে ৩৬ ঘণ্টা। এত দেরি করে হাত জোড়া লাগানো যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ না করা হলে কাটা হাতে পচন ধরে যাওয়া স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে ওই অংশ জোড়া লাগানো সম্ভব নয়। প্লাস্টিকে মুড়ে, বরফে রেখে সংরক্ষণ করলেও ৮-১০ ঘণ্টার বেশি থাকে না শরীরের কোনও কাটা অঙ্গ, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

এই অবস্থায় রেণু যদি হাত ফিরে নাও পান, তাহলে তাঁর চাকরির কী হবে (Nurse Attack)?
চাকরির প্যানেলে নাম উঠে নিয়োগপত্রও হাতে পেয়ে গেছেন রেণু। কিন্তু এই অবস্থায় তিনি চাকরি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চিত স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সচিব নরেন্দ্রনাথ দত্ত আশ্বাস দিয়েছেন, রেণুর পাশে দাঁড়ানোর। তবে কী হবে, তা কেউই স্পষ্ট বলতে পারছেন না।
ঘটনায় এখনও গ্রেফতার করা যায়নি কাউকে। সরিফুল ও তার পরিবারের সকলে পালিয়ে গিয়েছে।
চুলে ‘বচ্চন ছাঁট’ নিয়ে আজও অভিনয়ের অপেক্ষায় বনগাঁর দীনবন্ধু! যদি ডাক আসে…