
নতুন মন্ত্রীদের ঘর বণ্টনের আগে পূর্ত দফতরের অফিসারেরা মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের কাছ থেকে একটা গাইড লাইন নিয়ে নেন। কোন মন্ত্রীকে কোন ফ্লোরে কোন ঘরটি দেওয়া হবে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের কাছাকাছি ঘরগুলি কাদের দেওয়া হবে ইত্যাদি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে এক দফা আলোচনা করে নেওয়াও রীতি।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে পূর্ত দফতরের একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ার জানতে চাইলেন ঘর নিয়ে তাঁর পছন্দ-অপছন্দর বিষয়ে। সুব্রতবাবু তাঁকে রাইটার্সের তিনতলার একটি ঘরের কথা জানিয়ে সহ্যাস্যে বললেন, ‘ওই ঘরটি বাদ দিয়ে আর যে কোনও ঘর দিলেই হবে।’
সুব্রতবাবুকে সেবারই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী হন। আগের মন্ত্রিসভায় ওই দফতর সামলেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র এবং তিনি তিনতলার ওই ঘরটিতেই বসতেন। সেই ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক মনে মনে ভাবলেন, সুব্রতবাবু বোধ হয় সিপিএমের মন্ত্রীর ছেড়ে যাওয়া ঘরে বসতে চান না। পরে জানা গেল, বিষয়টি মোটেই তা নয়।
ঘটনাটি তাহলে কী?
আসলে চল্লিশ বছর আগে সুব্রতবাবু সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভার কনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসাবে তিনতলার ওই ঘরটিতেই বসতেন। আর ওই ঘর নিয়ে তাঁর মনে পাকাপাকিভাবে ভূতের ভয় বাসা বেঁধেছিল।
ভূতের ভয় তাঁর বরাবরের সঙ্গী। যে কারণে ঘরে একা ঘুমতে পারতেন না। কলকাতার বাইরে গেলে সার্কিট হাউস কিংবা হোটেলের ঘরে কেউ না কেউ তাঁর ঘরে থাকতেন। বেশিরভাগ সময়ই তাঁর একান্ত সহকারীদের কেউ থাকতেন। কারণ সন্ধ্যার পর একা ঘরে থাকলে তাঁকে ভূতের ভয় গ্রাস করত। যেমন আরও এক কংগ্রেস নেতা প্রয়াত সোমেন মিত্রর ছিল সাপের ভয়। তিনি এমনকী সিনেমার পর্দায় সাপের দৃশ্য দেখলে চোখ বন্ধ করে রাখতেন।
তবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ভূতের ভয় ছিল রূপকথার মতো। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের কাজে একটা সময় প্রতি বছরই বিদেশ যেতেন। ইওরোপ, আমেরিকার বহু শহরে একাধিকবার গিয়েছেন। একবার জেনেভায় গিয়ে মহা সমস্যায় পড়েন। পাঁচতারা হোটেলের যে ঘরটি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল, সেটির বাইরেই ছিল বিশাল ঘন একটা বন। একেবারে গা ছম ছম করা পরিবেশ। সুব্রতবাবুর দিনের বেলা দেখা সেই বনের কথা রাতে মনে পড়তেই তিনি হোটেল কর্তাদের বলে ঘর বদলে নেন।
রাইটার্স বিল্ডিংসের সেই ঘর নিয়েও মহা ফাঁপড়ে পড়েছিলেন। তিনি গল্প শুনেছিলেন, ভূতের হাত-পা বাঁকা হয়। ঘটনাচক্রে তাঁর এক সহকারীর পা খানিক বাঁকা ছিল। তার উপর এক সাহেবের মৃত্যু কাহিনি রাইটার্সে মুখে মুখে ঘুরত। সে কাহিনি সুব্রতবাবুকেও কেউ একজন গল্প করেছিলেন। তিনি তা শুনে একেবারে কুঁকড়ে যান। সেই ব্রিটিশ অফিসার নাকি তিনতলায় সুব্রতবাবুর ওই ঘরের উল্টোদিকেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।
জরুরি অবস্থা চলাকালে সুব্রতবাবুকে অনেক রাত পর্যন্ত রাইটার্সে থাকতে হত। আর বরাবরই সন্ধ্যার পর সরকারি এই বাড়িটির শ্মশানের চেহারা নিত। তবে পুলিশ ও কর্মী-অফিসার পরিবৃত হয়ে ওই ঘরেই কাজ চালিয়ে যেতেন তিনি। সম্ভবত ভয় কাটাতেই ভূতভীতির কথা সুযোগ পেলেই একে তাঁকে বলতেন।