
এদিন সূর্যবাবু বলেন, “বাংলাদেশের শহিদের নামে আমার মেয়ের নাম রেখেছিলাম রোশনারা। মাঝে মাঝে জামাই এসে ঝগড়া করে আমায় বলে, এখন যদি ওরা জিজ্ঞেস করে রোশনারা হিন্দু না মুসলিম, কী হবে বলুন তো!” এনআরসি বা এনপিআর নিয়ে কর্মীদের উদ্দেশে সূর্যবাবুর স্পষ্ট নির্দেশ, “যে-ই তথ্য জানতে আসুক, কোনও তথ্য দেবেন না। তারপর যা হবে দেখা যাবে।”
তাঁর নিজের নাম নিয়েও অনেক কথা বলেন সূর্যবাবু। সিপিএমের এই পলিটব্যুরোর সদস্য বলেন, “আমার যদি স্কুলের বা এমবিবিএস সার্টিফিকেট দেখেন, তা হলে সেখানে নাম রয়েছে সূর্যকুমার মিশ্র। ভোটার লিস্টে নাম রয়েছে সূর্যকান্ত মিশ্র। ৭৭ সাল থেকে যতবার ভোটে দাঁড়িয়েছি, সূর্যকান্ত মিশ্র নামেই দাঁড়িয়েছি। জেতার পর ওই নামেই সার্টিফিকেট দিয়েছে ওরা।” তিনি এ-ও বলেন, এই কান্ত আর কুমারের জটিলতার জন্য এখন তিনি কোনওটাই ব্যবহার করেন না। শুধু সূর্য মিশ্র নামে সই করেন।
ওড়িশার প্রাক্তন সিপিএম সম্পাদক ওলি পট্টনায়েকের কথা উল্লেখ করে বলেন, “উনি ইংরাজিতে ওলি নামের বানান লিখতেন ‘এএলআই’। একবার এক আমলা ওঁকে বলেছিলেন, আপনি আলি আবার পট্টনায়েকও? এই রকম অনেক সমস্যা অনেকের হতে পারে।”
সূর্যবাবুর মেয়ে রোশনারা মিশ্র রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের অধ্যাপিকা। বাম আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীও বটে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আসলে এই জমানায় কেউই সুরক্ষিত নন। আক্রমণটা হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের উপর নেমে এসেছে।”
এমনিতে সূর্যবাবু ব্যক্তিগত জীবনের কোনও কথাই দলীয় সভায় বলেন না। সেদিক থেকে এদিনের বক্তব্য ব্যতিক্রমী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে। তবে আরও একটি দিক থেকে জলপাইগুড়ির সভা রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের অনেকে। কারণ জলপাইগুড়ির সিপিএম জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য্য দলের মধ্যে কট্টরপন্থী হিসেবেই পরিচিত। কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের গাঁটছড়া বাঁধা নিয়ে যে কয়েকজন হাতেগোনা নেতা রাজ্য কমিটিতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ২০১৬ এবং তার পরবর্তীতে, সলিলবাবু তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এদিন জেলা কংগ্রেস নেতা নির্মল ঘোষ দস্তিদারের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগি করলেন তিনিও।