
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘ভবিষ্যতের ভূত’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারকে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, এই ছবির উপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজ্য সরকার।
গত ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল বন্ধ রাখা যাবে না প্রদর্শনী। সিনেমা হলে দেখাতে হবে অনীক দত্তর ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’। এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। অবিলম্বে ছবির প্রদর্শন শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ছবির প্রদর্শন নিয়ে যাতে আর কোনও ঝামেলা না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য মুখ্য ও স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজিপি-কে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
কিন্তু দেশের শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের পরেও শহরের অধিকাংশ হলেই চালু হয়নি ছবির প্রদর্শন। এ কথা সুপ্রিম কোর্টকে জানায় ছবির প্রযোজনা সংস্থা। ফলে ২৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপরি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ফের বলেন, রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে সমস্ত হলকে জানাতে হবে এই ছবি দেখাতে কোনও আপত্তি নেই। সেই সঙ্গে আদালত এ দিন এও বলেছে, এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে সিনেমা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ। এরপর গত ৫ এপ্রিল শহরের বিভিন্ন হলে নতুন করে রিলিজ হয় ‘ভবিষ্যতের ভূত’।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রিলিজ হয়েছিল অনীক দত্তর ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’। কিন্তু রিলিজের একদিনের মধ্যেই শহরের প্রায় সব হলে বন্ধ হয়ে যায় ছবির প্রদর্শন। মাল্টিপ্লেক্স থেকে সিঙ্গল স্ক্রিন বাদ যায়নি কিছুই। হলের তরফে কোথাও বলা হয় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে ছবির প্রদর্শন। কোথাও বা বলা হয় ‘ওপর মহলের’ অর্ডার আছে। এমনকী আগাম টিকিট কেটে ছবি দেখতে আসা দর্শকদের টাকাও ফেরত দেওয়া হয়।
ছবি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ‘ভবিষতের ভূত’-কে হলে ফেরানোর দাবিতে পথে নামে কলকাতার নাগরিক সমাজ। প্রতিবাদে সরব হন টলিপাড়ার অভিনেতারা। কলকাতা, দুর্গাপুর–সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় মিছিল হয়েছে। ছবি দেখাতে না দেওয়াকে ‘ফাসিস্ত প্রবণতা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
ছবির প্রদর্শন বন্ধ হওয়ার পরেই ময়দানে নামে ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর প্রযোজনা সংস্থা। প্রথমে তারা লিখিত অভিযোগ জানায় Eastern India Motion Pictures Association (EIMPA)-এর কাছে। প্রযোজক কল্যাণময় চট্টোপাধ্যায় জানান, ৪৪টি হলে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখানোর ছাড়পত্র পেয়েছিল ছবির প্রযোজনা সংস্থা Indibility Creative Private Limited (ICPL)। অভিযোগ ছিল, যতগুলো হল পাওয়ার কথা ছিল তার থেকে কম সংখ্যক হল পেয়েছিল ‘ভবিষ্যতের ভূত’। তবে যে যে হলে ছবি দেখানোর অনুমতি ছিল সেই সব হলের মালিকরা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিনেমা প্রদর্শনের জন্য আগাম টাকাও নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও বন্ধ করে দেওয়া হয় ছবির প্রদর্শন।
Eastern India Motion Pictures Association (EIMPA)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ICPL জানতে চায়, কোনও যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই কীভাবে বন্ধ করা হলো ছবির প্রদর্শন? প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী কোনও ছবির প্রদর্শন বন্ধ করার অধিকার একমাত্র সেন্সর বোর্ডের। বাকি কোনও সংস্থা তা করতে পারে না। প্রযোজক কল্যাণময় চট্টোপাধ্যায়ের বলেন, এ ভাবে ছবির প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে সেন্সর বোর্ড ও আদালতের অবমাননা করা হয়েছে।
এরপর ৬ মার্চ ‘ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমাটির প্রদর্শন বন্ধ কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। মামলা করেন দুই সিনেমাপ্রেমী। তাঁদের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান, মামলার আবেদনে বলা হয়েছে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে ছবিটি ১৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়। তাঁরা কলকাতার কয়েকটি মাল্টিপ্লেক্সে ছবিটি দেখতে গিয়ে জানতে পারেন সেটির প্রদর্শন বন্ধ রয়েছে। সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া কোনও ছবির প্রদর্শনী বন্ধ রাখা যায় কিনা সেই প্রশ্ন তোলা হয় মামলার আবেদনে। মামলার আবেদনকারীরা হাই কোর্টের কাছে এও জানতে চান, কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার কোনও নির্দেশ দিয়ে ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ রাখতে বলেছে কিনা।
হাইকোর্টে এই মামলা উঠেছিল বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে। সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানিয়েছেন, ‘ভবিষ্যতের ভূত’ বন্ধের জন্য কোনওরকম নির্দেশ দেয়নি রাজ্য সরকার। এমনকী প্রাথমিক ভাবে পরিচালক অনীক দত্তকে কলকাতা পুলিশের তরফে একটি চিঠি পাঠানো হয়। জানতে চাওয়া হয়, ছবির বিষয়বস্তু। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই চিঠি নিয়েও বিশেষ কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।