
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বৃহস্পতিবার সকালে উঠেই দু’হাতে দুটি ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। নিজের বাইক থাকলেও তা চালানোর সুযোগ হয় না। দুটো হাত তো সবসময় দুটি ফোনে ব্যস্ত। সারাক্ষণ চোখ রাখতে হচ্ছে তাতে। কোথাও কোনও গণ্ডগোল হচ্ছে কিনা তা ক্রমাগত খেয়াল রাখতে হচ্ছে ৩৬ বছরের তরুণ দীপক দাসকে। কারণ, তিনি কোচবিহারের বিজেপির আইটি সেল আহ্বায়ক। কোচবিহারে সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের প্রচারের প্রধান দায়িত্ব এই দীপকবাবুর হাতে।
দুটি ফোন ও ব্যাটারি চার্জার হাতে নিয়ে দীপকবাবু জানান, “আমি দলের কোচবিহার জেলার আইটি সেলের আহ্বায়ক। আমি ১ হাজার ১১৪টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন। আমি কোচবিহার জেলার দলের ফেসবুক পেজেরও দায়িত্বে রয়েছি। টুইটারের ট্রেন্ডও আমি দেখভাল করি।” তবে দীপকবাবুর মতে, শুধু তিনিই নন, তাঁর মতো এরকম পার্টিকর্মী থাকার জন্যই গোটা জেলায় সবার মধ্যে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে। দীপকবাবু বলেন, “এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা সেইসব মানুষের কাছেও পৌঁছতে পারছি, যেখানে তৃণমূলের বাধায় আমরা এমনি অবস্থায় যেতে পারতাম না। আমার একটা ফোনে আমি ২২৯টি গ্রুপের অ্যাডমিন। অন্য ফোনটায় ৮৮৫টি গ্রুপের অ্যাডমিন। প্রতিটি গ্রুপে কমপক্ষে ৩০ থেকে ২৫০জন মতো সদস্য রয়েছে। অনেকেই গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যায়। অনেকে আবার যুক্ত হয়। ফলে এই সংখ্যা পরিবর্তন হতে থাকে।”
দীপকবাবু জানান, সকাল ৬টা থেকেই কাজ শুরু হয়ে যায় তাঁর। এমনকী পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে বায়ুসেনা হামলার পর ২৪ ঘণ্টা একটানা কাজ করেছিলেন তাঁরা, এমনটাই দাবি করেছেন দীপকবাবু। তাঁর কাজে সাহায্যের জন্য ৪০ জনের একটি দল রয়েছে কোচবিহারে। তিনি বলেন, “প্রথমের দিকে আমরা সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করতাম। তখনই অনেক ফোন নম্বর পাই আমরা। সেই ফোন নম্বরগুলি কাজে লাগিয়েই এই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি আমরা।”
উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি দীপকবাবুর। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তারপরই তাঁকে বিজেপির ব্লক সভাপতি করা হয়। ২০১৫ সালে একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের কর্মকাণ্ড শুরু করেন দীপকবাবু। তারপর আরেকটি ফোন ও ব্যাটারি চার্জার তাঁকে দলের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এমনকী তাঁর যাতায়াতের সব খরচও বিজেপির তরফে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
দীপকবাবুর কথায়, কলকাতায় আইটি সেলের একটি ট্রেনিংয়ে অংশ নেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, “হাওড়াতে অমিত শাহের সভাপতিত্বে একটি সেশনে অংশ নিয়েছিলাম আমি। অমিত শাহ আমাদের আইটি যোদ্ধা বলে ডেকেছিলেন। তিনি আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের কী করা উচিত ও উচিত নয়। তাঁর নেতৃত্বে ৪০ জনের দল সারাক্ষণ মোবাইল ও ভাড়াতে নেওয়া দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায়। যেখানেই কোনও খবর পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়াতে শুরু করেন তিনি। ভাইরাল করে দেওয়া হয় সেই ছবি বা ভিডিয়োকে।
তবে এই কাজে বেশ কিছু অ্যাকাউন্টও যে তাঁদের ব্যবহার করতে হয়, সেটাও স্বীকার করেন দীপকবাবু। তাঁর কথায়, “আমার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, আরও অনেকেরই আছে। কিন্তু এমন অনেকে আছেন, যাঁরা সরাসরি নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে কথা বলতে পারেন না। আর তাই বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের থেকে অনেক বেশি অ্যাকাউন্ট তৃণমূল ব্যবহার করে। তৃণমূল যে কাজ করে, আমরাও সেই অস্ত্রেই তাদের বাধা দিই।” দীপকবাবুর কথায়, তাঁরা লক্ষ্য রাখেন কোথাও শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা কোনও অপরাধ বা বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন কিনা। জড়িয়ে পড়লেই সেই ঘটনাকে ভাইরাল করে দেওয়ায় তাঁদের প্রধান কাজ। তবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বার্তা নয়, এমনই বিভিন্ন বিষয়ের খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দেন দীপকবাবু।
সামনে থেকে লড়তে ভয় পান না বিজেপির এই আইটি সেল আহ্বায়ক। তবে তাঁর জন্য হুমকি ফোন, বা দোকান ভাংচুরের চেষ্টা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে এ সবের পরেও দিনরাত নিজের কাজে ব্যস্ত তিনি। দুটি ফোন ছাড়াও অবশ্য আরও একটি ফোন আছে তাঁর। সেটা অবশ্য শুধুমাত্র কথা বলার জন্যই।
আরও পড়ুন
https://www.four.suk.1wp.in/news-state-why-tmc-minister-rabindranath-ghosh-demands-repoll-in-coochbehar/