
থার্টি ফাস্টের সকাল থেকেই সরগরম বাংলার রাজনীতির ময়দান। কয়লা, গরু পাচারের তদন্তে সিবিআইয়ের একাধিক টিম হানা দিয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। তৃণমূলের তাবড় যুব নেতা বিনয় মিশ্রর বাড়ি-অফিসে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। ঠিক সেই সময়েই সিবিআইয়ের একটি বিরাট টিম পৌঁছে গিয়েছে হুগলির কোন্নগর স্টেশনের পশ্চিম দিকে কানাইপুরের শাস্ত্রী নগরে।
কী ব্যাপার?
নিরজ সিং ও অমিত সিং দুই ভাই। তাঁদের বাড়িতেই হানা দিয়েছে সিবিআই। গরু পাচার তদন্তের সূত্র ধরে এই অভিযান চলছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সূত্রে খবর।
স্থানীয়রা বলছেন, গত ছ’সাত মাস ধরে এই দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে গোটা এলাকা হয়ে উঠেছিল গরু পাচারের এপিসেন্টার। শাস্ত্রী নগরের বাসিন্দা এক প্রাথমিক শিক্ষকের কথায়, “হিন্দমোটর কারখানা এখন জনমানবহীন। সন্ধে নামলে ওই রাস্তায় কেউ যান না। গা ছমছম করে। ওখানেই শয়ে শয়ে গরু বেঁধে রাখা হত।”
কী ভাবে পাচার হত?
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ধরা যাক সোমবার দুপুরে কয়েক ট্রাক গরু আনা হল। তাদের বেঁধে রাখা হত। এক, দু’দিন, তিনদিন পর্যন্ত কয়েকশ গরুকে বেঁধে রাখা হত ওই টেস্টিং রোডে। তারপর হঠাৎ সকালে উঠে স্থানীয়রা দেখতেন কয়েকশ গরু ভ্যানিশ!
কোথায় যায় সেই গরু?
স্থানীয়রা স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। শুধু এটুকু জানাচ্ছেন, রাত্রি ১২টার পর থেকে অনেক ট্রাক আসত। তাতে তুলে নিয়ে যাওয়া হত গরুগুলিকে। গত কয়েক মাস ধরে এটাই চলছে। স্থানীয়রা এও জানাচ্ছেন, ভিন রাজ্যের নাম্বার প্লেট লাগানো ট্রাকও ঢুকত এলাকায়। কোনওটা বিহার, কোনও ঝাড়খণ্ডের বোর্ড লাগানো।
প্রশাসন জানত না?
শাস্ত্রীনগরের অনেকেই বলছেন, প্রশাসন হয়তো সব জানত। বলত না। কেন সেটা হয়তো তারাই জানে। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, “কাদের মদতে চোরা কারবার চালালে পুলিশ কিছু বলে না সেটা সবাই জানে! সব জায়গায় যেমন এখানেও তেমন।”
গরু পাচারে মূল অভিযুক্ত এনামুল হককে গতকালই তোলা হয়েছিল আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে। একটি ডায়েরি আদালতে পেশ করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, ওই ডায়েরিতেই কাঁচা হিসেব লেখা রয়েছে, গরু পাচারের কোটি কোটি টাকা এনামুল কার কার কাছে পৌঁছে দিত। হতে পারে সেই সূত্র ধরেই এদিন হুগলিতে হানা দিয়েছে সিবিআই। দুপুর পর্যন্ত সিবিআই গোয়েন্দারা অমিত, নিরজদের বাড়িতে রয়েছেন। জানা গিয়েছে, বাড়িতে নিরজ থাকলেও অমিত নেই। এখন দেখার এখান থেকে কোন পথে এগোয় তদন্ত। তবে অনেকে বলছেন, এটা নিশ্চিত যে, হিন্দমোটরের এই গরু রাজনীতির গাছে উঠবেই।