
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কালো হীরে বলে কথা!
আসানসোল এবং লাগোয়া এলাকায় এই কয়লাই যত সমস্যার মূলে। অনেকে বলেন, এখানকার রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন—সবটাই কয়লা নিয়ে। বেআইনি কয়লা তোলা যেন এখন সংক্রমণের আকার নিয়েছে এই এলাকাতে। বাড়ছে কয়লা মাফিয়াদের দাপট। বাড়ছে তাদের পরিধি। অভিযোগ, এই সব দেখেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।
বাম আমলে কয়লা খাদান নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ তুলত বিরোধীরা। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী নেত্রী থাকার সময়েও বেআইনি কয়লা তোলা নিয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে সরব হতেন। সরকারে আসার পর বর্ধমানের এই শিল্পাঞ্চলে আলাদা করে পুলিশ কমিশনারেট করেছেন মমতা। প্রশাসনকে টানটান রাখতে বর্ধমানকে ভাগ করেছেন দুটি জেলায়। কিন্তু কোথায় কী! এখন নাকি কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের চোখের সামনেই চলে কয়লা লুঠ। যারা গোটা অপারেশন করে, তাদের নাকি কোনও ভয়ডরও নেই। যদিও আসানসোলের পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রসাদ সিং এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ইসিএলের পক্ষ থেকে যখনই আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ ওঠে, তখনই আমরা ব্যবস্থা নিই!”
বিসিসিএলের চাঁচ ভিক্টোরিয়া এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সিদ্ধার্থশঙ্কর দাস গত ১৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ কমিশনার কে চিঠি দিয়ে বেআইনি কয়লা তোলা রুখতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। অভিযোগ, এর পরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। বরং কয়লা মাফিয়ারা তাদের এলাকা বাড়িয়ে আসানসোল ছাড়িয়ে বারাবনি, সালানপুরেও মাটি কেটে কয়লা তোলা চালিয়ে যাচ্ছে।
সাত বছর বয়স হয়ে গেল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের। কিন্তু কয়লা মাফিয়াদের রমরমা এখনও অটুট বলেই স্থানীয়দের অনেকের মত। কয়লার কাঁচা পয়সাই এই অঞ্চলের সমস্ত অসামাজিক কাজের মূলে। বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলের রাজনীতির খোঁজ রাখা অনেকেই বলেন, বাম আমলেও এই ব্যধি ছিল। কিন্তু সেটা খুব সংগঠিত ভাবে। জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে একজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া থাকত কয়লা দেখার জন্য। তিনিই সবটা করতেন। তাঁদের মতে, তৃণমূল সরকারে আসার পর সেটাই আরও খোলামেলা হয়ে গিয়েছে। অনেকের এও অভিযোগ, কোন থানায় কোন অফিসার পোস্টিং হবেন, সেটাও নাকি মাফিয়ারাই নিয়ন্ত্রণ করে।
ছাঁট কয়লার বখরা নিয়ে শাসক দলের মধ্যেও কোন্দল কম নেই। মুখ্যমন্ত্রীকেও একাধিক প্রশাসনিক ও দলীয় সভায় এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। শুধু তো পশ্চিম বর্ধমান জেলা নয়, লাগোয়া বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকও এই ‘কোল জোন’-এর মধ্যে পড়ে। গত তিন বছরে খয়রাশোল ব্লকের তিন তিনজন তৃণমূল সভাপতি খুন হয়ে গিয়েছেন। অনেকে বলেন, যেই ওখানে সভাপতি হোন, তিনি কয়লা সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে চান। আর তা থেকেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সমস্যা অনেক গভীরে। বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে। আজ বললেই কাল বন্ধ করে দেওয়া যাবে বিষয়টা এমনটাও নয়। লেজে পা পড়লে মাফিয়ারাও ফোঁস করবে। কিন্তু প্রশাসন তো পদক্ষেপ করবে। যাতে তারা বুঝতে পারে, পুলিশ প্রশাসন বলে একটা ব্যাপার আছে। অনেকের মতে, এখন সেটাই নেই। প্রশাসনের গা-ছাড়া ভাবেই আসানসোল জুড়ে দৌরাত্ম্য চলছে কয়লা মাফিয়াদের।