
বঙ্গোপসাগরে ঘনিয়ে উঠছে গভীর নিম্নচাপ
মৌসম ভবন সতর্ক করেছে বঙ্গোপসাগের আরও এক নিম্নচাপ ঘনীভূত হতে চলেছে। এই নিম্নচাপ জট পাকিয়েই ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দেবে। এখন সেই ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। আন্দামান সাগর (উত্তর) ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের পূর্ব-মধ্য অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপ তৈরি হবে ২২ তারিখ নাগাদ, অর্থাৎ শনিবার। এই নিম্নচাপ আরও জলীয় বাষ্প টেনে ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি করবে। সাগর থেকে উত্তর-পশ্চিম পথে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলের দিকে আসবে। ২৫-২৬ তারিখ নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে দুই রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে।
ঘূর্ণিঝড়ের কী প্রভাব পড়বে বাংলায়?
আবহবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল হতে পারে বুধবার নাগাদ। তার আগে মঙ্গলবার সন্ধে থেকেই হাল্কা-মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে বাংলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। গাঙ্গেয় বঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা বাড়বে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে সতর্কতাও জারি হয়েছে।
বৃষ্টির সঙ্গেই প্রবল বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। আন্দামান সাগর পার হওয়ার সময়েই ঘণ্টায় ৪৫-৬৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইবে। শক্তি বাড়িয়ে যত উপকূলের দিকে ধেয়ে আসবে বাতাসের বেগও বাড়বে। রবিবার থেকেই ঝড়ের দাপট মালুম পাওয়া যেতে পারে। উপকূলের জেলাগুলিতে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। মঙ্গল ও বুধবার ঝড়ের বেগ আরও বাড়বে। গত বছর মে মাসে বঙ্গোপসাগরেই এমনই গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল যার ভয়ঙ্কর পরিণতি ছিল আমফান। গোটা দক্ষিণবঙ্গ তছনছ করে দিয়েছিল সেই সুপার সাইক্লোন।
বিপর্যয় মোকাবিলার কী প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য–
পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় পরের বুধবার নাগাদ আসতে পারে, বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করে দিল রাজ্য
বঙ্গোপসাগরে কেন এত ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হচ্ছে?
আবহবিজ্ঞানীরা এর জন্য জলবায়ু বদলকেই দায়ী করেছেন। বলা হচ্ছে, বিশ্ব উষ্ণায়ণের কারণে সমুদ্রতলের উষ্ণতা বাড়ছে। সাধারণত, সমুদ্রতলের উষ্ণতা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই সঙ্গে বায়ুপ্রবাহ, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ইত্যাদি আরও ফ্যাক্টর কাজ করে। তবে সমুদ্রতলের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের জন্মের সম্ভাবনা ঠিক কতটা তা এখনও গবেষণার স্তরেই আছে।
মৌসম ভবন, বলছে, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রতলের উষ্ণতা ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে পারিপার্শ্বিক বায়ুপ্রবাহ, জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব সব দিক দেখেই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।