Latest News

রক্ত পৌঁছচ্ছিল না হার্টে, জটিল অস্ত্রোপচারে সদ্যোজাতের প্রাণ বাঁচালেন দুর্গাপুরের ডাক্তাররা

দ্য ওয়াল ব্যুরো: জন্মের আগেই ক্ষত ধরা পড়েছিল হার্টে। শিশুটি তখন মাতৃগর্ভে। ছ’মাসের গর্ভবতী মাকে ডাক্তাররা বলেছিলেন, ভ্রূণের হার্টে একটি ক্ষত আছে। এ শিশু জন্মালে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। গর্ভপাত করাই শ্রেয়। কিন্তু রাজি হননি মা। প্রসবের পরে সন্তানকে বাঁচাতে মুর্শিদাবাদ থেকে ছুটে গিয়েছিলেন দুর্গাপুরের হেলথওয়ার্লড হাসপাতালে। সদ্যোজাত তখন মৃতপ্রায়। সেই অবস্থা থেকে জটিল অস্ত্রোপচারে শিশুটির প্রাণ বাঁচিয়ে নজির গড়লেন ডাক্তাররা।

 

ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি করে হার্টে ছিদ্র ধরেছিলেন ডাক্তাররা

দুর্গাপুর হেলথওয়ার্ল্ড হাসপাতালের ডাক্তাররা বললেন, গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্টে কোনও সমস্যা আছে কিনা তা জানা যায় ‘ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি’ করে। জন্মের  আগে ‘ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি’ করানো হয়। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে বোঝা সম্ভব যে, গর্ভস্থ ভ্রুণের কোনও হার্টের সমস্যা রয়েছে কি না। যদিও দেখা যায়, গর্ভস্থ ভ্রুণটি বড় কোনও হার্টের সমস্যা নিয়ে জন্মাচ্ছে, তা হলে ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সেই ভ্রুণ নষ্ট করে দেওয়া হয়। নষ্ট না করা হলেও, জন্মানোর পরের মুহুর্তেই সেই শিশুর চিকিৎসা শুরু করা হয়। জন্মানোর ২০ সপ্তাহ আগে এই পরীক্ষা করানো হয়।

What Is Fetal Echocardiogram And Why Is It Done?

এই টেস্টে ধরা পড়ে শিশুটি হার্টে কোনও অ্যাবনর্মালিটি নিয়ে জন্মাচ্ছে কিনা। শিশুটির পরিবারে হৃদরোগের কোনও ইতিহাস আছে কিনা, শিশু গর্ভে থাকার সময় মা এমন কোনও ওষুধ খেয়েছিলেন কিনা বা অ্যালকোহলের অধিক নেশা করেছিলেন কিনা যার কারণে হার্টে সমস্যা রয়েছে। ফিটাল ইকো করে আগে থেকেই হার্টের সমস্যা বা ক্ষত ধরা পড়লে তা সারানো সম্ভব। তবে এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কার্ডিওলজিস্ট দরকার।

Fetal heart abnormalities detailed before birth by new 3D images

কীভাবে শিশুটির প্রাণ বাঁচান ডাক্তাররা

দুর্গাপুর হাসপাতালে ডাঃ নুরুল ইসলাম ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি করে ধরেন যে গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্টে একটি স্পট আছে। তিনি তখন শিশুটির বাবা-মাকে বলেন চাইলে গর্ভপাত করানো যেতে পারে, তবে শিশুটির পরিবার রাজি হয়নি। মুর্শিদাবাদের হাসপাতালে শিশুটির জন্ম হয়। জন্মের পরেই বাচ্চাটির সারা শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল, অক্সিজেনের মাত্রা ৫০ এ নেমে গিয়েছিল। শিশুটিকে নিয়ে তখন দুর্গাপুরের হেলথওয়ার্ল্ডেই ছুটে আসেন তার বাবা-মা।

ডাক্তারবাবু বলছেন, ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি করে দেখা যায়, বাচ্চাটির হার্টের ডান দিকের ভালভ ও চেম্বারগুলো ঠিক মতো তৈরি হয়নি। এই চেম্বারগুলো হল ট্রাইকাসপিড অ্যাট্রেসিয়া, হাইপোপ্লাস্টিক রাইট ভেন্ট্রিকল এবং পালমোনারি অ্যাট্রেসিয়া। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বাচ্চার হার্টে রক্ত সঞ্চালন হবে না, ফলে ফুসফুসে রক্ত পৌঁছতেই পারবে না। ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হবে শিশুর এবং মৃত্যুও হবে তাড়াতাড়ি। গর্ভাবস্থায় সব ভ্রূণের হার্টে একটি ধমনী থাকে যাকে বলে ডাক্টাস আর্টেরিওসাস। জন্মের পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই শিশুটির ক্ষেত্রে হার্টে যে ক্ষত ছিল তা মেরামতির জন্য যে ধরনের অস্ত্রোপচার দরকার তা করতে গেলে প্রাণের ঝুঁকি থাকত। তাই সার্জারি করে এই ধমনীটা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তাররা। এই ধমনী যদি অ্যাকটিভ রাখা যায়, তাহলেই শিশুটির হার্ট থেকে রক্ত ফুসফুসে পৌঁছবে। পরে শিশুটি বড় হলে তখন অস্ত্রোপচার করা যাবে।

ডাঃ নুরুলের নেতৃত্বে শিশুটির পায়ের শিরা দিয়ে একটি স্টেন্ট ওই ধমনীতে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের অস্ত্রোপচারকে বলে ‘পারকিউটেনিয়াস ডাক্টাল স্টেনটিং’। এর ফলে হার্টের ডানদিকের ভালভ তৈরি না হলেও ওই ধমনীতে লাগানো স্টেন্ট দিয়েই বাচ্চার ফুসফুসে রক্ত পৌঁছতে পারবে।

ডাক্তারবাবুরা বলছেন, শিশুদের জন্মগত হৃদপিণ্ডের সমস্যাকে প্রধানত দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটিকে বলা হয় সায়ানোটিক। আর দ্বিতীয়টি হল, নন সায়ানোটিক। সায়ানোটিক মানে, আমরা সহজ ভাষায় ব্লু-বেবি বলি। নন সায়ানোটিক, মানে ব্লু বা নীল নয়, কিন্তু এই শিশুদেরও হৃদপিণ্ডে সমস্যা রয়েছে। সায়ানোটিক সমস্যায়, জন্মের পরেই শিশুর গায়ের রং নীল হতে থাকে। শিশু খেতে পারে না। এমনই অবস্থা হয়ে যে, শিশু মায়ের দুধও পর্যন্ত খেতে পারে না। নন সায়ানোটিক শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ের রং পরিবর্তন হয় না। ফলে খুব দ্রুত এই রোগ ধরা পড়ে না। দেড় বা দুই মাস পরে থেকে দেখা যায় শিশুর ওজন বাড়ছে না। খাওয়া কমে যাচ্ছে। খাওয়ার সময় শিশু ঘেমে যাচ্ছে। তখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ ধরা পড়ে। সেক্ষেত্রে ফিটাল ইকো কার্ডিয়োগ্রাফি করলে সমস্যা দ্রুত ধরা পড়ে। এই ফিটাল ইকো নিয়ে এখনও সেভাবে প্রচার হয়নি। ডাক্তাররা বলছেন, কলকাতার বাইরে জেলার হাসপাতালেও ফিটাল ইকোর মতো পদ্ধতিতে শিশুর হার্টের সমস্যা চিহ্নিত করে সার্জারি হচ্ছে, এটা সত্যিই প্রশ্ংসনীয় ব্যাপার

You might also like