
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পশ্চিম বর্ধমান: খনি অঞ্চল জামুড়িয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মিঠাপুরের একাংশ যেন ঝুলন্ত উপত্যকা। মিঠাপুরের কোড়াপাড়া অঞ্চলের অন্তত দেড়শো বাসিন্দা এখন ভয়ে ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সকালের দিকে ভয়ে ভয়ে বাড়িতে এলেও রাতে সেখানে থাকার ফরসা পাচ্ছেন না। কেউ রাত কাটাচ্ছেন এলাকার কোনও স্কুল বাড়িতে। অনেকে আবার একেবারে খোলা মাঠে।
কোড়াপাড়ার নীচে বরাবর রয়েছে কয়লা খনি। সেখান থেকে কয়লা বের করা হয়েছে তবে ঠিক মতো ভরাট করা হয়নি। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন তাঁদের গ্রামের একাংশ রয়েছে একেবারে ঝুলন্ত অবস্থায়। ব্যাপারটা এলাকার লোকজন বুঝেছেন দিন কয়েক আগে।
কয়েক দিন আগে বৃষ্টির জল প্রবল বেগে গিয়ে মিঠাপুর কোড়াপাড়া বাসিন্দা ভক্তি গড়াইয়ের কুয়োয় গিয়ে পড়তে থাকে। তখন কোড়াপাড়ার কালীমন্দির লাগোয়া এলাকায় পুরোনো কুয়োর দেওয়ালের এক প্রান্তে গর্তের সৃষ্টি হয়। তিনি বিষয়টি লক্ষ করে পাড়াপ্রতিবেশীদের জানালে তাঁরা ওই কুয়োর ৪৫ ফুট গভীরে বড়সড় গর্ত রয়েছে বলে বুঝতে পারেন। প্রবল বৃষ্টিতে দেওয়ালের গর্তের মাটি সরে গিয়ে একটা ফাঁকা অংশ বেরিয়ে পড়ে। এলাকার যুবকরা সাহস করে ওই কুয়োয় নামেন। নেমে তাঁরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। চার যুবক অন্তু কোড়া, বাপি কোড়া, গণেশ কোড়া ও বাবু মাঝি গর্তের মধ্যে ঢুকে, টর্চ জ্বালিয়ে মাপামাপিও শুরু করে দেন। ফিতে দিয়ে মেপে তাঁরা দেখেন প্রায় কুড়ি ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট জায়গা একেবারে ফাঁকা। জায়গাটি চওড়ায় ৪৯ ফুট এবং লম্বায় ৬৩ ফুট মতো – মানে অনেকটা আয়তাকার মাপের জায়গা একেবারে ফাঁকা। এ যেন মাটির নীচে একটা ছোটখাট ফুটবল মাঠ!
জায়গাটা পুরো ফাঁকা ঠিক বলা যায় না। এখানে গাছের অসংখ্য শেকড় রয়েছে। সেগুলি ফাঁকা জায়গা অতিক্রম করে আরও গভীরে চলে গেছে। তাঁরা সে সবের ছবিও তোলেন। ছবি তুলে এনে এলাকার লোকজনকে তাঁরা সে সব দেখান। ছবি দেখে এলাকার বাসিন্দারা ভীষণ ভয় পেয়ে যান। তাঁরা বুঝতে পারেন, যে কোনও সময় তাঁরা হুড়মুড় করে মাটির নীচে ঢুকে যেতে পারেন। কয়েক দিন আগে এমন ঘটনা ঘটেছিল তবে অন্য এলাকায়। মারা গিয়েছিলেন এক মধ্যবয়সী মহিলা।
সোমবার রাত থেকেই ঘুম উড়েছে সকলের। এলাকার কবিতা কোড়া, মুন্নি কোড়ারা বাড়িঘর ছেড়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে গ্রাম লাগোয়া এলাকার স্কুল ঘরে এমনকি মাঠে-ময়দানে কাটাতে শুরু করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, যে কোনও সময় ধসের কবলে পড়তে পারেন। ওই এলাকার প্রায় শদেড়েক বাসিন্দা এখন চিন্তায়।
ইতিমধ্যেই তারা এ নিয়ে খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। খনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মিঠাপুর এলাকার বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে যেতে চাইছেন না। তাঁরা চাইছেন কোনও ভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে খনি কর্তৃপক্ষ ওই ফাঁকা অংশটির ভরাট করে দিক। এলাকাটিকে তাঁদের বসবাসের উপযুক্ত করে দিক। তাতে তাঁদের বাস্তুচ্যুত হতে হবে না আবার সরকারকেও পুনর্বাসন দেওয়ার ঝুঁকি নিতে হবে না। ইসিএলের কাছেও তারা সেই অনুরোধই করেছে।