
মঙ্গলবার ম্যারাথন জেরার পর গরু পাচার কাণ্ডে সতীশ কুমারকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। প্রথমে তাঁকে ডাকা হয় নিজাম প্যালেসে। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত তাঁকে জেরা করার পর গ্রেফতার করা হয়। বুধবার সকালে তাঁকে পেশ করা হয় আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে। সেখানে সতীশ কুমারের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।
এদিন আদালতে কালীচরণ মিশ্র অভিযোগ করেন, সতীশ কুমারের শ্বশুরমশাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। অথচ তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৩ কোটি টাকা রয়েছে। এই টাকা কোথা থেকে এল? ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালে পর্যন্ত যে সময় মালদায় বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের দায়িত্বে ছিলেন সতীশ কুমার, সেই সময় তাঁর বেকার ছেলের অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢোকে। এই টাকার উৎস কী?
সিবিআইয়ের আইনজীবী আরও অভিযোগ করেন, প্রথমবার নোটিস এড়িয়ে যান সতীশ কুমার। তিনি ৩২ দিন কলকাতায় ছিলেন। সেই সময় তিনি সাক্ষীদের হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এদিন আদালতের সামনে একাধিক সাক্ষীর বয়ানের কপি জমা দেয় সিবিআই। তাঁরা সিবিআইয়ের সামনে এসে সাক্ষী দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। এদিন বিচারকের সামনে কালীচরণ মিশ্র জানান তদন্তে সহযোগিতা করছেন না সতীশ কুমার।
মালদায় সতীশ কুমার বিএসএফের দায়িত্বে থাকার সময় প্রায় ২০ হাজার গরু বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেগুলি কম দামে পাচারকারীদের বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। তারপরে সেগুলি ফের বাংলাদেশে পাচার করার অভিযোগও উঠেছে। প্রতিবার পাচারের সময় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকায় রফা হত বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছে সিবিআই। এই কাজে কাস্টমসের অনেক কর্তাও যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ। সেই কারণেই সতীশ কুমারকে নিজেদের হেফাজতে চায় তারা। বিচারক বিএসএফ কর্তার ১৪ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে সতীশ কুমারের সল্টলেকের বাড়িতে প্রথম হানা দিয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। তারপর সপ্তাহ দুয়েক আগে ফের এই বিএসএফ কর্তার বাড়ি এবং মানিকতলার এক ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালান কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সির আধিকারিকরা। জেরার জন্য নোটিস পাঠানো হয় তাঁকে।
এর আগে গরু পাচার কাণ্ডে মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ী এনামুলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে যান এনামুল। তারপর নিজাম প্যালেসে এসে হাজিরাও দেন।
সিবিআই সূত্রের মতে, বিএসএফ কমান্ডান্টের গ্রেফতার তাৎপর্যপূর্ণ। আগে কেন্দ্রীয় ক্যাডারের অফিসারকে হেফাজতে নেওয়া হল। কিন্তু শুধু তো এই বিএসএফ কর্তা পাচার কাণ্ডে জড়িত নন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অনেকে জড়িয়ে থাকতে পারে। ফলে এই গ্রেফতার আরও বড় চক্রের হদিশ দিতে পারে। আর তার প্রথম ধাপ হিসেবে সতীশ কুমারকে নিজেদের হেফাজতে পেল সিবিআই। এখন দেখার এই তদন্তের ঘটনা প্রবাহ কোন খাতে বয়।