
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রধান মহুয়া দাস বৃহস্পতিবার এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, মুর্শিদাবাদের একটি মুসলিম কন্যা এবার প্রথম হয়েছে। সংসদের ইতিহাসে এর নজির নেই। সংসদ সভানেত্রীর এই মন্তব্যের জন্য এত যে সমালোচনা হচ্ছে, তাতে বাস্তবিকভাবেই ইতি চান কান্দি রাজা মনীন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবিউল আলম। তিনি নিজে স্কুলের হেডমাস্টারমশাই। তাঁর স্ত্রীও শিক্ষিকা। বাবা-মায়ের শিক্ষাতেই মেয়ে রুমানা এবার উচ্চমাধ্যমিকে এককভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু সাফল্যের গর্ব বাবা-মায়ের মনকে যতটা ছুঁয়েছে, তার থেকেও বেশি ব্যথা দিয়েছে মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এত বেশি আলোচনা ও সমালোচনা।
কিন্তু রুমানা নিজেই তো বলেছে ‘মুসলিম কন্যা’ না বলে ‘ছাত্রী’ বললে বেশি ভাল হত! মেয়ের মতামতে সায় নেই বাবার। স্পষ্ট বললেন, “মেয়ের কথা বাদ দিন। বাচ্চা মেয়ে কী বলেছে। আমার ও আমাদের পরিবারের কোনও সমস্যা নেই মহুয়াদির মন্তব্য নিয়ে। মুসলিম মেয়ে বলাটা কি খারাপ? যা সত্যি তাই তো বলেছেন। এতে কি আমার মেয়ের মেধা কমে যাবে? ধর্ম নিয়ে যাঁরা এত মাতামাতি করছেন তাঁরা আসলে নীচু মানসিকতার। দয়া করে এই বিতর্ক বন্ধ করুন।”
এই বিতর্কের সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুরে। উচ্চমাধ্যমিকের ফল ঘোষণার সময়। মেধাতালিকা এবার প্রকাশ করা হয়নি। ফলাফল ঘোষণার পরে অনেকেই সভানেত্রী মহুয়া দাসকে প্রশ্ন করেন সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে যে তার নামটা একবার বলতে। আর সেই নাম বলতে গিয়েই সভানেত্রী বলেন, সংসদের ইতিহাসে এই প্রথম এত ভাল রেজাল্ট করেছে একজন। একক ভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। সে একজন মুসলিম কন্যা। বিতর্ক তৈরি হয় এই ‘মুসলিম’ শব্দটা নিয়েই। ছাত্রীর পরিচয় দিতে গিয়ে কেন ধর্মকে টেনে আনা হল সেই নিয়ে কার্যত ঝড় ওঠে। নেটমাধ্যম তো বটেই, উত্তাল হয়ে ওঠে রাজনৈতিক মহলও। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন সভানেত্রী মহুয়া দাস। সেই বিতর্ক থামেনি। ক্রমে বেড়েই চলেছে। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হচ্ছে বলে আজই বিবৃতি দিয়েছে বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশন। সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়ার তরফে প্রকাশিত বিবৃতির ছত্রে ছত্রে মহুয়াদেবীর মন্তব্যের নিন্দা করা হয়েছে। ব্যাপারটা এখানেই থেমে থাকেনি। এদিন দুপুরে সল্টলেকে শিক্ষা সংসদের দফতরের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্যরা। মহুয়াদেবীর পদত্যাগের দাবিও তোলা হয়েছে।
মহুয়াদেবী বলছেন, আবেগের বশে ওই কথা বলেছিলেন। দ্য ওয়ালের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, “মেয়েটি যে এত ভাল ফল করেছে তা আমাদের গর্ব, সংসদের গর্ব। এই প্রথমবার সংসদের ইতিহাসে এত ভাল নম্বর পেয়েছে একটি মেয়ে। এই গর্বের কথা আবেগের সঙ্গেই বলেছিলাম। কাউকে আঘাত দিতে চাইনি।” মহুয়াদেবী বলছেন, প্রতিবারই সংসদে ফল ঘোষণার সময় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাল নম্বর পেয়ে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের কথা উল্লেখ করা হয়। যেমন, নেপালি ভাষায় পাশ করা ছাত্রছাত্রী, অলচিকিতে ভাল নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের কথা বলা হয়। এর আসল উদ্দেশ্য হল, প্রান্তিক জায়গা থেকে উঠে আসা ছেলেমেয়েদের উৎসাহ ও মনোবল বাড়ানো। আগামী দিনে বাকিরাও যাতে এগিয়ে আসতে পারে সেটাই লক্ষ্য। সে জন্যই তিনি মেয়েটির পরিচয় দিতে গিয়ে মুসলিম বলেছিলেন। আর গর্বের সঙ্গেই বলেছিলেন। সভানেত্রী বলেন, “আমার কথা কারও ভাবাবেগে আঘাত দিলে আমি দুঃখিত। কিন্তু আবারও বলছি, কাউকে দুঃখ দেওয়ার জন্য বলিনি। মেয়েটির সাফল্য আর গৌরব সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছি।”