
গঙ্গাসাগর মেলায় নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা তা জানতে তিন সদস্যের কমিটি তৈরি হয়েছে। এই কমিটিতে চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞদের না নিয়ে কেন রাজনৈতিক নেতা-ব্যক্তিত্বদের রাখা হল সে নিয়েই মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে। আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে এই মামলার শুনানিতে কমিটি পুনর্গঠনের জন্য জোর সওয়াল করেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা। কিন্তু সাগর মেলা বন্ধ না করার পক্ষেই অনড় থাকে রাজ্য সরকার। সেষ পর্যন্ত শুনানির শেষে রায়দান স্থগিত রাখে আদালত।
তিনটি মামলা করার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিন আবেদনকারী কবিরুল ইসলাম, অজয় কুমার দে ও প্রমোদ ভার্মা। তাঁদের তরফে আইনজীবীরা বক্তব্য রেখেছেন, শুধুমাত্র শর্ত মানলেই কোভিড রোখা সম্ভব নয়। মেলায় লাখ লাখ পুণ্যার্থীর ভিড় হয়। এই বিপুল জমায়েত থেকেই ভয়ঙ্কর করোনা ছড়াতে পারে। মামলাকারীদের আবেদনে হাইকোর্ট যে ৩ সদস্যের কমিটি গড়েছে, তাতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতির বিরোধিতা করা হয়েছে। বরং এর পরিবর্তে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গড়ার আবেদন করা হয়েছে।
আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্রের বক্তব্য, গঙ্গাসাগর মেলার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য ২০০১ সালে কমিটি তৈরি হযেছিল। রাজ্যের সার্বিক করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে হাইকোর্টের নির্দেশে যে কমিটি তৈরি হয়েছে সেখানে চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী, অন্যান্য ভাইরোলজিস্ট বা অভিজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়োগ করা যেতে পারত। কিন্তু তা করা হয়নি। রাজনৈতিক নেতাদের থেকে চিকিৎসকরা করোনা পরিস্থিতি অনেক ভাল বুঝবেন বলে সওয়াল করেন তিনি।
এর জবাবে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৪ জানুয়ারিতে তৈরি করা হয়েছিল সেই কমিটি। তখন আপত্তি জানানো হয়নি।তাহলে এখন সমস্যা কোথায়?
আবার কেন কমিটি পুনর্গঠনের কথা বলা হচ্ছে?
এজি-র বক্তব্য, গঙ্গাসাগর মেলার সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে চিকিৎসক অভিজিৎ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে হাই পাওয়ার কমিটি তৈরি হয়েছে। তাই কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
মামলাকারী অজয় দে-র পক্ষের আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী আদালতে জানান, গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে যে বিজ্ঞপি জারি করা হয়েছে তাতে মেলা প্রাঙ্গণ এবং সাগর আইল্যান্ড নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। সাগর দ্বীপ নিয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি। শুধুমাত্র মেলা প্রাঙ্গনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হোক বলে আবেদন করেন তিনি।
আইনজীবীর বক্তব্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জেড প্লাস নিরাপত্তা পান। তিনি গঙ্গাসাগর পরিদর্শন করতে গেলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর জন্যই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অথবা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অথবা সদস্যদের গঙ্গাসাগর মেলা পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিলেই হবে।
মামলাকীরার বলছেন, ডায়মন্ড হারবার থেকে ঝুঁকি নিয়ে মানুষজন গঙ্গাসাগরে যাচ্ছেন। চিকিৎসক, পুলিশ, পুরকর্মী, মেডিকেল অফিসার, নার্স সকলেই আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। তাহলে কেন কিসের স্বার্থে এই মেলা?চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করার আবেদনও করেন তিনি।
এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি রাজ্যের মতামত জানতে চাইলে এজি জানান, তিনটি সংবাদপত্রে তিনটি আলাদা ভাষায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। ডাক্তার সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। উনি নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন আগেই। ডাক্তারদের কমিটি হলে রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি। তবে আদালত আজকের মতো রায়দান স্থগিত রেখেছে।