Latest News

অজানা জ্বর প্রাণঘাতী উত্তরবঙ্গে, জলপাইগুড়িতে মৃত তিন মাসের শিশু, রায়গঞ্জে আক্রান্ত অনেক

দ্য ওয়াল ব্যুরো: উত্তরবঙ্গ জুড়ে অজানা জ্বরের (Fever) প্রকোপ চিন্তা শতগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে(Jalpaiguri) বছর ছয়েকের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ভাইরাল নিউমোনিয়ার উপসর্গ ছিল শিশুটির। আজ বুধবার মাত্র দু’দিনের জ্বরে মারা গেছে তিন মাসের একটি শিশু। ধুম জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে ময়নাগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল শিশুটিকে। আজ ভোরেই মৃত্যু হয়েছে তার।

ধুম জ্বর (Fever), আচমকা অজ্ঞান। এই উপসর্গ নিয়ে গত কয়েকদিনে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) সদর হাসপাতালে শিশুদের ভিড় বাড়ছে। তাছাড়া জেলার একাধিক হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি শতাধিক। অজানা জ্বরের প্রকোপ মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে জলপাইগুড়ি ও তার আশপাশের এলাকায়। একেই কোভিড আতঙ্ক রয়েছে, তার মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলায় ক্রমে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শিশুদের অসুস্থতা। সদর হাসপাতালে ইতিমধ্যেই এক শিশুর মৃত্যুতে উদ্বেগ বেড়েছে। তার পরে আজ মাস তিনেকের একটি শিশুর মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে।

আরও পড়ুন: আরএস ভাইরাসে কি আক্রান্ত শিশুরা? ভাইরাল নিউমোনিয়া নিয়ে কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি ৬

সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ির হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি অন্তত ৮৮ জন। এখনও অবধি চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। একের পর এক শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল সহ জেলার একাধিক হাসপাতালে। জ্বরের সঙ্গে ডায়েরিয়ারও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ডাক্তার রাহুল ভৌমিক গতকালই বলেছিলেন, গত চার-পাঁচ দিনে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে অন্তত ১৩৯ জন শিশু। দু’জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। ডাক্তাররা প্রাথমিকভাবে মনে করছে ভাইরাল ফিভার, আবার জাপানি এনসেফেলাইটিস ছড়িয়েছে কিনা সে আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। বস্তুত, জ্বরের কারণ কী তা এখনও অবধি ঠিকমতো বুঝেই উঠতে পারেননি ডাক্তাররা।

জেলা হাসপাতালের পাশাপাশি গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতেও এই ধরনের উপসর্গ নিয়ে প্রচুর শিশুকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে সোমবার বিকেলে জলপাইগুড়িতে এসে পৌঁছয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের টিম। আক্রান্ত শিশুদের রক্ত ও লালার নমুনা কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য।

শিশুদের জ্বরে আক্রান্তর খবর জানতে পেরে গতকাল রাতে জলপাইগুড়ির বিধায়ক ডাক্তার প্রদীপ কুমার বর্মাকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতাল পরিদর্শনে যান তৃণমূল জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ। হাসপাতালের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুদের অসুস্থতা বাড়ছে। গোটা পরিস্থিতিই গুরুত্ব সহকারে নজরে রাখা হচ্ছে।

একদিকে জলপাইগুড়ি জ্বরের প্রকোপ মারাত্মক, অন্যদিকে উত্তর দিনাজপুরেও অজানা জ্বর ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দুই দিনাজপুর থেকেই রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা।  মঙ্গলবারই জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ১৪ জন শিশু ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। আক্রান্ত শিশুদের বয়স ৫০ দিন থেকে তিন বছরের মধ্যে। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সময় ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে। বাচ্চাদের অনেক বেশি সাবধানে রাখতে হবে। হাত ধোওয়া, মাস্ক পরা এগুলো তো আছেই, বাচ্চাদের পেশির খিঁচুনি হচ্ছে কিনা বা শ্বাসের সমস্যা হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। এই সময় রেসপিরেটারি সিনসিটিয়াল ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে শ্বাসনালীতেও সংক্রমণ দেখা দেয়। তখন ফুসফুসে প্রদাহ, তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এমন কোনও লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে বাবা-মায়েদের।

আর জাপানি এনসেফেলাইটিস হলে তার উপসর্গ কিছু আলাদা। স্ত্রী কিউলেক্স মশা থেকে জাপানি এনসেফেলাইটিসের জীবাণু ছড়ায়। এই রোগের ভাইরাস সরাসরি মস্তিষ্কে হানা দেয়। তা ছাড়া, জ্বর, বমি, মাথাব্যথা, ঝিমুনি তো রয়েছেই। সময় ধরা না পড়লে মৃত্যু অবধি হতে পারে। তবে ভাইরাল নিউমোনিয়া, জাপানি এনসেফেলাইটিস নাকি রেসপিরেটারি ভাইরাসের সংক্রমণ, তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।

পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকা সুখপাঠ

You might also like