
সিপিএম সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, খসড়া প্রতিবেদনে ছাত্র-যুব ফ্রন্ট সম্পর্কে ইতিবাচক কথা থাকছে। কিন্তু সেইসঙ্গে এও বলছে, শ্রমিক-কৃষকের দল কখনওই ছাত্র-যুব আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে টিকে থাকতে পারে না। জেলার নেতারা যাঁরা সম্মেলনে প্রতিনিধি হয়ে আসবেন তাঁদের বার্তা দেওয়া হবে, এখনই যদি শ্রমিক ও কৃষক ফ্রন্টে মনোনিবেশ না করা যায় তাহলে বাংলায় পার্টির কাঠামো টিকিয়ে রাখা মুশকিল।
এও জানা গিয়েছে, ওই খসড়া প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দলের তরফে শত শত সার্কুলার, অসংখ্য পার্টি চিঠিতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হলেও সেই কাজ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে জেলা ও এরিয়া কমিটিগুলির অনীহাকে দায়ী করেছে আলিমুদ্দিন।
নদিয়ার এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘অনেকে বলেন আমরা, আমাদের পার্টি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছি। তা একেবারেই নয়। বরং এটা বলা যায়, আমরা শ্রেণি বিচ্ছিন্ন হয়েছি।’ তাঁর কথায়, ‘যে অংশের লোকের সিপিএমের সঙ্গে থাকার কথা, যে কোনও কারণেই হোক তাঁদের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না।’
কেন যাচ্ছে না?
এ ব্যাপারেও আলিমুদ্দিনের খসড়ায় একটি বড় অংশ থাকছে বলে খবর। সেখানে বলা হচ্ছে, শাখাস্তরের সদস্যদের পার্টির কাজে সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। সেখানেও উল্লেখ থাকছে, সবাই যে ইচ্ছাকৃত সময় দিচ্ছেন না তা নয়। একটি বড় অংশ রয়েছেন যাঁরা বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি করেন। তাঁরা সপ্তাহে মেরে কেটে দু’বেলা দলের কাজে সময় দিচ্ছেন।
রাজ্য সিপিএম সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, খসড়ায় উল্লেখ থাকছে, চল্লিশোর্ধ্ব যাঁরা যুব ফ্রন্ট ছাড়ছেন তাঁদের অন্য গণসংগঠনে যুক্ত করার ক্ষেত্রে তৎপরতা আনতে হবে। মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর প্রশ্নে পৃথক ব্লুপ্রিন্ট ছকতে চাইছে সিপিএম। তা ছাড়া শহরাঞ্চলে বস্তি ফ্রন্টের কাজ নিয়েও খসড়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করা হচ্ছে বলে খবর।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘ট্রেড ইউনিয়ন এবং কৃষক ফ্রন্ট যে দুর্বল হয়েছে তা সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। সারা দেশে কৃষক আন্দোলন জমাট বাঁধলেও বাংলায় তার প্রভাব দেখা যায়নি। আমরা দিল্লির ছবি দেখিয়ে প্রচার করেছি। কিন্তু কৃষক আন্দোলনের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জেলাগুলিতে সংগঠনকে নাড়াচাড়া করাতে পারিনি। রোগ চিহ্নিতই রয়েছে। এখন ভ্যাকসিন দরকার।’
জেলায় জেলায় সম্মেলনে গিয়ে রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র বলছেন, এমন আন্দোলন করতে হবে যা দাবি ছিনিয়ে আনতে পারে। আবার হাওড়ার সম্মেলনে এসে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য হান্নান মোল্লা বলে গিয়েছেন, বাংলায় পার্টি কেবল কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা করে চলেছে। আন্দোলনের দৃঢ়তা দেখা যাচ্ছে না। বাংলা সিপিএমের সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আন্দোলনের সমস্ত সম্ভাবনা মজুত রয়েছে। কিন্তু পার্টি তাকে কাজে লাগাতে পারছে না।
আবার এ ব্যাপারে একাধিক জেলার বক্তব্য, আন্দোলনের তীব্রতা তৈরির ক্ষেত্রে বাধা হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বই। কারণ, তারাই নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ডেপুটেশন, অবস্থানের ‘গান্ধীবাদী’ পথকে দলের মধ্যে অভ্যাসে পরিণত করে দিয়েছে। ফলে আলিমুদ্দিনের খসড়া এবং জেলার পাল্টাযুক্তিতে আন্দোলনের তীব্রতা না থাকার দায় কার তা নিয়েও বিতর্কের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে।