
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সোমবার পার্কস্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে বড়দিনের উৎসব উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় নগরপালের উদ্দেশে ভূয়সী প্রশংসা ঝরে পড়ল। বললেন, ‘খুব ভাল কাজ করেছে।’ পুর-ভোট নির্বিঘ্নে’ উতরে দেওয়ার জন্যই যে ওই সাধুবাদ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, রবিবারের ভোটে পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করেছে। পুলিশের সামনেই তৃণমূল অবাধে ভোট লুঠ করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের মন্তব্যে বিরোধীদের সব অভিযোগই সরকার উড়িয়ে দিল বলা চলে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের জায়গায় সৌমেন মিত্রকে নগরপালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল৷ সৌমেন মিত্রের নেতৃত্বে যেভাবে কড়া হাতে ভোটের সময় দায়িত্ব পালন করেছিল কলকাতা পুলিশ, তা সব মহলেরই প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ কিন্তু তখন সৌমেন মিত্রর কাজে খুশি ছিলেন না মমতা।
নির্বাচনের মুখে বিজেপির লাগাতার অভিযোগের ভিত্তিতে রাজীব কুমারকে সরিয়ে সৌমেন মিত্রকে কলকাতার পুলিশে কমিশনার পদে বসায় নির্বাচন কমিশন। সেই বছর ১৩ এপ্রিল নগরপালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। বদল নিয়ে সেসময় কম জলঘোলা করেনি শাসক তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রাজীব কুমারের অপসারণকে রীতিমতো ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ করে তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশনকে প্রকাশ্যে তীব্র কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি ঘটনায় রুষ্ট মমতা।
কিন্তু সেবার দায়িত্ব নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে কলকাতার ভোটে নিরপত্তা ব্যবস্থা সামাল দিয়ে নাগরিক সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ১৯৮৮ ব্যাচের এই দুই আইপিএস অফিসার। যদিও তাতে মমতার মন ভেজেনি।
দ্বিতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের আগেই সৌমেন মিত্রকে কলকাতা পুলিশের কমিশনার পদ থেকে সরিয়ে গুরুত্বহীন পদে একপ্রকার পানিশমেন্ট ট্র্যান্সফারই দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার নগরপালের চেয়ারে আবার রাজীব কুমারকে ফিরিয়ে আনেন তিনি। সৌমেন মিত্রকে পাঠানো হয় এডিজি প্রশিক্ষণে।
সেই সৌমেন মিত্রকেই এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে কাছে টেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। কর্মক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসে সৌমেন মিত্রকে পুরস্কৃতও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তারপর এদিনের প্রশংসা, সবমিলিয়ে বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক মহলের অনেকে। তাঁদের মতে, সৌমেন মিত্র এমনিতে খুবই বলিষ্ঠ অফিসার। তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব প্রশাসনিক মহলে সর্বজনবিদিত। তবে তাঁদের মতে, দুটি ভোট সৌমেন মিত্রকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।