Latest News

কংগ্রেসের হাত ধরে নয়, বাম জোটেই বেড়েছে ভোট, দাবি সিপিএম জেলা সম্পাদকের

শোভন চক্রবর্তী

একযুগ পর যেন ভেন্টিলেশন থেকে আইসিইউ-তে ফেরা! (ventillation) (icu)
২০০৯-এর লোকসভা ভোট। সেই যে বাংলায় বামেদের ভোটে (vote) (erosion) ধস নামা শুরু হয়েছিল তা যেন রোখা যাচ্ছিল না। ষোলয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট, উনিশে ভোটের মুখ পর্যন্ত জোট করব করব করেও তা না করা, একুশে আবার কংগ্রেস-আইএসএফকে নিয়ে সংযুক্ত মোর্চা—সমস্ত কৌশল যেন প্রবল তোড়ে বালির বস্তার মতো ভেসে যাচ্ছিল। একটার পর একটা ভোট যাচ্ছিল আর তাতে স্পষ্ট হচ্ছিল রক্তক্ষরণ চলতে চলতে রক্তশূন্যতার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে বামেরা (left)।
অবশেষে কলকাতার পুরভোটে (kmc) (vote) বামেদের ভোট কমার ধারাবাহিকতা থমকেছে। আট মাস আগে একুশের বিধানসভায় যে ফল হয়েছিল তার থেকে অনেকটা বাড়ল (increase) ভোট শতাংশ। চার থেকে বেড়ে প্রায় ১২ শতাংশ। দুটি আসনে জয় (win)। জামানত জব্দ দশা থেকে বেরিয়ে এসে ৬৫টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয়। আর এটাকেই রুপোলি রেখা (silver lining) হিসেবে দেখতে চাইছে সিপিএম (cpm)তথা বাম নেতৃত্ব।

কিন্তু কী ভাবে হল? কেনই বা হল?
দ্য ওয়াল-কে সিপিএমের কলকাতা জেলার সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদার জানালেন, “অতীতে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কলকাতার ভোটে আমরা যে রণকৌশলগত লাইন নিয়েছিলাম তা এই ফলাফলের অন্যতম কারণ।” কী সেই লাইন? কল্লোলবাবুর কথায়, “প্রি-পোল অ্যালায়েন্স (ভোটের আগে জোট) না করা।”

এদিন কল্লোল মজুমদার স্পষ্ট করেই বলেছেন, “একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপি যা যা করার চেষ্টা করেছিল তাতে তারা ধাক্কা খায়। সেই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সাংগঠনিক জোর বিজেপি অর্জন করতে পারেনি। আমরা সেটাকেই কাজে লাগিয়েছি।”

একথা ঠিক যে বামেদের কাছে এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিজেদের রাজনীতিটাকে টিকিয়ে রাখা। অর্থাৎ খানিকটা ডারউইনের তত্ত্ব মেনে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। নইলে দিব্য চক্ষে দেখা যাচ্ছিল বাংলায় বামেদের বিপন্নতা। কল্লোল মজুমদার বলেন, “আমরা ভোটের আগে একটা ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছতে পেরেছিলাম, সেটা হল, নিজেদের শক্তি, বামফ্রন্টের শক্তি না বাড়ালে অন্য বামশক্তিকে সমবেত করা বা আরও বৃহত্তর আঙ্গিকে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ আমরা করতে পারব না। তাই আমরা ঠিক করি, আমাদের যেখানে শক্তি রয়েছে, আমাদের পার্টির এবং বামফ্রন্টের—সেখানে আমরা লড়াই করব।”

বামফ্রন্ট এবারে কলকাতার ভোটে ১২৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। বাকি জায়গায় তারা বলেছিল, তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী শক্তিকে ভোট দিতে। কল্লোলবাবুর কথায়, সেইসব ওয়ার্ডগুলিতে দলের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল বলেই খোলা মনে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক এও বলেন, আগে থেকে জোট হলে ভোট ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। অতীতে তাই হয়েছে। তিনি এও মেনে নিয়েছেন, খাতায় কলমে যোগ করে বাম ও কংগ্রেসের ভোট মিলিয়ে পাটিগণিতে অনেক কিছু ফল বের হতে পারে তবে বাস্তবতা তা নয়। অর্থাৎ কংগ্রেসের মিছিলে হাঁটতে যেমন বাম সমর্থকদের সঙ্কোচবোধ হয় তেমন কংগ্রেসেরও তাই। কল্লোলবাবুর কথায়, ভোটের আগে জোট না হওয়ার ফলে বাম ও কংগ্রেস দুই শিবিরেই ভোট বেড়েছে। এটাই বাস্তব।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সিপিএম বা বাম নেতাদের অধিকাংশ যখন শুধুমাত্র বুথ দখল ও ছাপ্পা দেওয়ার কথা বলে কমিশন বা পুলিশের দিকে আঙুল তুলছেন তখন কল্লোল মজুমদার কাটা কাটা বাক্যেই জানালেন, “রিগিং, দেদার ছাপ্পা প্রতিরোধ করতে গেলে যে সাংগঠনিক জোর দরকার তা এখনও অর্জন করা যায়নি। সেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।” অনেকের মতে, অধিকাংশ বাম নেতা যখন শুধুমাত্র প্রশাসনের ভরসা করছেন তখন কল্লোলবাবু বলছেন পাল্টা প্রতিরোধ গড়তে সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ের কথা।

কল্লোল মজুমদার সিপিএমের অন্দরে কট্টরপন্থী লাইনের অন্যতম নেতা হিসেবেই পরিচিত। ২০১৬ তে যখন রাজ্য কমিটিতে গৌতম দেবদের জোটের লাইনের চূড়ান্ত দাপট, যার পিছনে তখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো নেতা—তখনও যে নামগুলো সেই লাইনের বিরুদ্ধে কথা বলতেন তাঁদের মধ্যে অমল হালদার, কল্লোল মজুমদার, বিপ্লব মজুমদার, সলিল আচার্যরা ছিলেন উল্লেখযোগ্য। সিপিএমের অনেকে বলেন, যে কারণে কল্লোলবাবুকে দীর্ঘদিন সংগঠনেও কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু জোট ভেঙে একা লড়েই বাম শিবিরে নতুন সম্ভাবনার আশা দেখিয়েছে কলকাতার ভোট।

 

You might also like