Latest News

সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা কীভাবে হবে? ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরামর্শ আইসিএমআরের

দ্য ওয়াল ব্যুরো: কালাচের ছোবল বোঝা যায় না। আবার চন্দ্রবোড়ার ছোবলে (Snake Bite) প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং চিকিৎসার জন্য সময় নষ্ট করা যাবে না একেবারেই। চিন্তার ব্যাপার হল সাপে কাটা রোগীকে ঠিক কতক্ষণে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, ডাক্তারদের কী করণীয়, সে নিয়ে সঠিক জ্ঞানই নেই। জেলা স্তরের অনেক হাসপাতালেই এখন সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ জানেনই না কীভাবে ট্রিটমেন্ট শুরু করতে হবে। এই বিষয়টায় গুরুত্ব দিতে ও চিকিৎসকদের সঠিক প্রশিক্ষণের জন্য উদ্যোগী হল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।

সাপে কাটলে (Snake Bite) ওঝা-গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়া এখনও গ্রামবাংলার অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই দস্তুর। ফলে মৃত্যুর সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। চিকিৎসকেরা সব সময়েই বলে আসছেন, সময় মতো রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু দেখা যায়, ওঝা-গুনিনের কাছে নিয়ে গিয়ে অনেকটা দেরি করে ফেলেন রোগীর আত্মীয়েরা। শেষে যখন উপায়ন্তর না দেখে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন চিকিৎসকদের আর কিছু করার থাকে না।

এক ছোবলেই ছবি, কোবরার কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু দুঁদে সাপুড়ের

মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি স্বাস্থ্য দফতরে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে সর্পদংশন ও তার চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন আইসিএমআরের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার তথা স্নেক বাইট ট্রেনিং এক্সপার্ট ডা. দয়াল বন্ধু মজুমদার। তিনি বলেন, রাজ্যের ৫০ শতাংশের এর বেশি চিকিৎসক জানেন না কী করে সাপে কাটা (Snake Bite) রোগীর চিকিৎসা করতে হয়। এদিকে এ রাজ্যে প্রতি বছরে গড়ে দু’হাজারের বেশি মানুষ সাপের ছোবল খেয়ে মারা যান। অথচ এই ব্যাপারে তেমন কোনও প্রচার বা কর্মসূচী হয় না।

ডা. দয়াল মজুমদার বলছেন, সাপের কামড়ে মৃত্যু ঠেকাতে দু’ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে–১) মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ২) ওঝা-গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা। বিশেষজ্ঞের দাবি, জেলাস্তরে অনেক হাসপাতালেই সর্পদংশনের চিকিৎসার পরিকাঠামো রয়েছে, কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকেই জানেন না কীভাবে রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। অনেকেই তাই অন্য হাসপাতালে রোগীকে রেফার করে দেন। এইভাবে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতেই রোগীর মৃত্যু হয়। আবার দেখা যায়, চিকিৎসা দেরিতে শুরু হওয়ার জন্য রোগীর কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞ বলছেন, সাপের কামড় খাওয়া রোগীর চিকিৎসায় যাতে কোনও বাধা না আসে সে জন্য ভিআরটি টিম তৈরি করা জরুরি। এই ব্যাপারে একটি প্রজেক্ট বানানোর জন্য ডা. মজুমদারকে অনুরোধ করেছিলেন জনস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের ওএসডি ডক্টর সুশান্ত রায়। ডা. মজুমদার তেমনই একটি প্রজেক্ট তৈরি করেছেন।

কী এই ভিআরটি টিম? কী কাজ করবে?

ভিআরটি টিম হল ভেনম রেসপন্স টিম। স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল টিম তৈরি হবে যারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।

অনেক সময়ে দেখা যায়, সাপে কামড়ানো রোগীকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন বিষ তাঁর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়েছে। সাপে কাটার পরে অনেক ক্ষেত্রে কুসংস্কারবশত ওঝা, গুনিনের কাছে নিয়ে সময় নষ্ট করেন রোগী বা তাঁর পরিবারের লোকেরা। ৭০-৮০ শতাংশ সাপে কামড়ানো রোগী চিকিৎসা করাতে প্রথমে ওঝার কাছেই যান। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্থানীয় হাসপাতালে ছুটে আসেন। বেশি দেরি হলে চন্দ্রবোড়া, গোখরো, কালাচ বা কেউটে কামড়ানোর (Snake Bite) পরে কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে পরিমাণমাফিক প্রতিষেধক দিয়েও বাঁচানো যায় না। তাই কুসংস্কার কাটাতে সচেতনতার বার্তাও দেবেন তাঁরা।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের ওএসডি ডাক্তার সুশান্ত রায় বলেছেন, “আমাদের আহ্বানেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জেলায় জেলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি করছেন। তিনি আমাদের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি সেটা স্বাস্থ্য দফতরে দেব। তাঁর প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।”

You might also like