
ব্যাপারটা কী!
ময়নাগুড়ি ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকেই এলাকাবাসীর তরফে নানান অভিযোগ উঠছে। যেমন, তাঁরা নাকি ভূত দেখছেন! সন্ধে হলেই অতৃপ্ত আত্মারা নাকি টহল দিচ্ছে পরিত্যক্ত কামরার আশপাশে। যখন-তখন ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। তবে সেসব অশরীরী উপদ্রবের হাত থেকে বাঁচতে সম্প্রতি হরিনাম সংকীর্তনের আয়োজন করেছিলেন তাঁরা।
চলতি মাসের ১৩ তারিখ ময়নাগুড়ির দোমহনী এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল বিকানির এক্সপ্রেস। লাইনচ্যুত কামরা একটির ওপর আরেকটি উঠে গেছিল। তাতে প্রান হারিয়েছিলেন ৯ জন, আহতের সংখ্যা ৬০ ছুঁয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের স্মৃতিতে সেই ভয়াবহ ছবি আজও টাটকা। সেই বিভীষিকার থেকে যেন মুক্তি নেই।
গ্রামবাসীদের দাবি, দুর্ঘটনার পর বেশ কয়েকটি দিন কেটে গেলেও এখনও কানে বাজে সেই চিৎকারের আওয়াজ। আশেপাশে অশরীরী আত্মারা রয়েছে বলেই দাবি এলাকার বাসিন্দাদের।
তবে দ্বিতীয় অভিযোগ আরওই গুরুতর। স্থানীয় চাষিরা বলছেন গাড়ির চাকায় পিষে এবং মানুষের পায়ের চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের জমির ফসল। তাঁরা চান ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
সেসব অভিযোগ পেয়ে দোমহনী এলাকায় গিয়েছিলেন ময়নাগুড়ির বিডিও শুভ্র নন্দী। কিন্তু গিয়েই তিনি প্রশ্নের মুখে পড়লেন। বিডিওকে দেখে এলাকাবাসীর দাবি, ভূত তো আসে রাতে! তিনি সকালে এসে বুঝবেন কী করে। সব শুনে বিডিও অবশ্য বললেন রাতেও এলাকা পরিদর্শন করবেন তিনি।
এলাকার চাষিদের দাবিকে মান্যতা দিয়ে রবিবার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমিগুলি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের নিয়ে পরিদর্শন করেন ময়নাগুড়ির বিডিও শুভ্র নন্দী। এর পরে বিডিও ভূত নিয়েও এলাকায় সচেতনতার প্রচার করলেন।
কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই কৃষি আধিকারিক এলাকা পরিদর্শন করেছেন। যেহেতু এই এলাকার কৃষকেরা কৃষি বন্ধু প্রকল্পের অন্তর্গত, তাই তাঁদের কৃষি বীমা অনুযায়ী ক্ষতিপূরন দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।
এদিন বিডিওর সঙ্গে এলাকা পরিদর্শনে যান জয়েন্ট বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। সেই দলের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদেরও দেখা গেছে। কিন্তু সেখানে ছিলেন না কোনও মানসিক চিকিৎসক বা কোনও যুক্তিবাদী সংগঠনের সদস্য। আর এতেই ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন তাঁদের দিয়ে কি আদৌ গ্রামবাসীদের মন থেকে ভূতের আতঙ্ক দূর করা যাবে?
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার স্বস্তি শ্রবণ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ভূত বলে তো কিছু হয় না।ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিবাদী সংগঠন বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় অবিলম্বে সচেতনতা প্রচার করা উচিত বলে মনে করছেন তিনি।