
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা রোগীদের “পশুদের চেয়েও বেশি” অবহেলা করা হচ্ছে। দিল্লির একটি করোনা-মৃত্যুর মামলায় এমনই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।
তবে শুধু দিল্লি নয়, এই একই অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুতেও। মোট চারটি রাজ্যেই মৃতদেহ ঠিকমতো নিয়ম মেনে সৎকার না করার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে কৈফিয়ৎ তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্র সরকারও যেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে, স্বতঃপ্রণোদিত তদন্ত করে অভিযুক্ত রাজ্যগুলির কাছে মৃতদেহ অন্যায় ভাবে বহন করার নিয়ম নিয়ে রিপোর্ট চায়।
প্রসঙ্গত, দিন দুয়েক ধরে এ রাজ্যেরই কলকাতা শহরে মৃতদেহের অসম্মান নিয়ে বড় বিতর্ক ঘনিয়েছে। একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে, যাতে দেখা গেছে আংটা দিয়ে টেনে, মাটিতে ঘষটে একের পর এক মৃতদেহ তোলা হচ্ছে গাড়িতে। এই ভিডিওটির সত্যতা ‘দ্য ওয়াল’ যাচাই করেনি। কিন্তু এই ভিডিওকে কেন্দ্র করেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় কড়া নিন্দা করেছেন রাজ্য সরকারের। অভিযোগ করেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়া মৃত ব্যক্তিদের এভাবেই নৃশংস ভাবে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন তুলেছেন, এই মৃত ব্যক্তিরা কারও পরিবারের হলে তাঁদের কেমন লাগত।
যদিও রাজ্য সরকার দাবি করেছে, এই মৃতদেহগুলির সঙ্গে করোনার কোনও সম্পর্ক নেই, এনআরএস হাসপাতালের মর্গে জমে থাকা ১৪ জনের বেওয়ারিশ দেহ পুরসভার মাধ্যমে সৎকার করা হয়েছে শ্মশানে। এই মর্মে বিবৃতি দিয়েছেন এনআরএস কর্তৃপক্ষও। পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগও করেছেন তাঁরা, ফেক ভিডিওর বিরুদ্ধে।
এই ঘটনার পরেই আজকে সুপ্রিম কোর্টের ধমক এবং বাংলা-সহ চার রাজ্যের মৃতদেহ নিয়ে অন্যায় আচরণকে ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
আজকের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট এই প্রসঙ্গই তুলেছে। আপ সরকারের সমালোচনা করে আদালত জানিয়েছে, মৃতদেহ নিয়ে কেন্দ্রের যে গাইডলাইন আছে, তা মানা হচ্ছে না।আদালত বলে “দিল্লির অবস্থা ভয়াবহ ও দুর্ভাগ্যজনক। মৃতদেহের যত্ন নিয়ে এতটুকু সচেতন নয় হাসপাতালগুলি। অনেক সময়ে মৃতের পরিবার জানতেও পারছে না রোগীর মৃত্যুর কথা। বহু ক্ষেত্রে মৃতের শেষকৃত্যে উপস্থিত পর্যন্ত থাকতে পারছেন না তাঁরা।”
শুধু তাই নয়, কোভিডে মৃতদের নিয়ে এই ক্ষোভ প্রকাশ করলেও, আক্রান্তদের নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। বলে, “এত হাসপাতালে এত বেড খালি, তবু বহু রোগী এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছেন ভর্তি হওয়ার জন্য। কোথাও হাসপাতাল চত্বরে জমছে মৃতের স্তূপ। অথচ অনেক বেড খালি বলে জানা যাচ্ছে।”
আদালতে মূলত কোভিডে মৃতদের নিয়ে কথা বলে হলেও, কলকাতার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, মৃত্যু করোনায় হোক বা না হোক, কোনও মৃত্যুর পরে কারও দেহই কি এভাবে টেনে হিঁচড়ে আংটায় করে ঘষটানোর কথা? এটা কি সেই ব্যক্তির চরম অপমান ও অবহেলা নয়? রাজ্যপালও এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, “পশুদের দেহও এমনভাবে টানাহেঁচড়া করা যায় না।” তাঁর সেই মন্তব্যকেই যেন আরও একবার উস্কে দিল দিল্লির অবস্থা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য।
দিল্লি ইতিমধ্যেই কোভিড আক্রান্তের নিরিখে সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছে। অথচ দিল্লিতে করোনা টেস্টের সংখ্যা আচমকাই অনেকটা কমে গেছে। তার উপরে আপ সরকারের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ও করোনায় আক্রান্ত কোনও রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় অসংবেদনশীলতার পরিচয় রাখছে তারা। এই নিয়েই রুজু হওয়া একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ মন্তব্য করে, “একজন করোনা রোগীর দেহ উদ্ধার হয়েছে নোংরার স্তূপ থেকে। রোগীরা ভুগে মারা যাচ্ছে, কেউ খেয়াল পর্যন্ত রাখছেন না। পশুদের থেকেও খারাপ ভাবে দেখা হচ্ছে তাঁদের।”
পাশাপাশি অরবিন্দ কেজরিবাল সরকারের কাছে শীর্ষ আদালত ব্যাখ্যা তলব করে, কেন শহরে টেস্টের সংখ্যা কমে গেছে। চেন্নাই ও মুম্বইয়ে যেখানে ১৬ হাজার থেকে টেস্ট বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার, সেখানে দিল্লিতে কেন সাত হাজার থেকে কমে পাঁচ হাজারে নেমেছে টেস্টের সংখ্যা।