
নির্বাচন পরবর্তী হিংসার পর্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেছিল বেঞ্চ। সেই তদন্ত কমিটি মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছিল। ধর্ষণ, খুনের মতো মারাত্মক অপরাধের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। রাজ্যের বাইরে মামলার বিচার সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছিল কমিটি। আরও বলেছিল, অন্যান্য অভিযোগের মামলাগুলির তদন্ত করা হোক আদালতের নজরদারিতে বিশেষ দল অর্থাত্ সিটকে দিয়ে। ফাস্ট ট্রাক কোর্ট, স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর, সাক্ষীদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার ব্যবস্থাও করা হোক, বলেছিল সেই কমিটি।
গত ৩ আগস্ট এ ব্যাপারে শুনানি শেষ হয়। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যন্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন, বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের বেঞ্চ রায়দান স্থগিত রাখে।
আদালতে পেশ হওয়া জনস্বার্থমূলক পিটিশনে অভিযোগ করা হয়, ভোটের ফল বেরনোর পর থেকে জেলায় জেলায় সন্ত্রাস চলছে। বিরোধী কর্মীরা বাড়িছাড়া। তাঁদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। তাঁদের জীবন, অধিকারের সুরক্ষা চাই।
যদিও শুনানি পর্বে রাজ্যের ডিজিপির পক্ষে বেঞ্চের সামনে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিটির রিপোর্টকে ভ্রান্ত, পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যা দেন। মানবাধিকার কমিশনের কমিটির কয়েকজন সদস্যের বিজেপি-যোগ থাকার অভিযোগ করে তিনি সেই রিপোর্ট খারিজের দাবি করেন। কমিটি কঠোর ভাষায় রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করে চূড়ান্ত রিপোর্টে লেখে, মূল বিরোধী দলের সদস্য সমর্থকদের ওপর প্রতিহিংসামূলক আচরণ করেছে শাসক দলের লোকজন। এর ফলে কয়েক হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, স্থানীয় পুলিশ এই হিংসায় সরাসরি লিপ্ত না থাকলেও কর্তব্য পালনে চূড়ান্ত গাফিলতি করেছে।
তবে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার এহেন অভিযোগ খারিজ করে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পাঠানো অভিযোগগুলির ক্ষেত্রে তো বটেই,তার বাইরেও একাধিক ক্ষেত্রে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এফআইআর দায়ের করেছে।
ভারত সরকারের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুর বেঞ্চকে জানান, হাইকোর্টের আদেশমাফিক সিবিআইয়ের মতো যে কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিকে দিয়ে তদন্ত করাতে তাঁরা প্রস্তুত।