
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২০১৯ সালেও একই রকম বিপর্যয় হয়েছিল। সেবার ২৭টি বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এখন আরও ২৩টি বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ৮-৯টি বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। কেন বউবাজারে (Bowbazar) পর পর বাড়িতে ফাটল ধরছে? মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ক্ষোভের মুখে পড়ল কেএমআরসিএল। শুক্রবার কলকাতা পুরভবনে কেএমআরসিএল, মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন চৌরঙ্গির বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় ও ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। সেখানেই তিনি বলেন, বারে বারে একই ঘটনা কেন ঘটছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। সবচেয়ে আগে দরকার ভূমি পরীক্ষা করা। সয়েল সার্ভে রিপোর্ট জমা করার পরেই মেট্রোকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে।
ফিরহাদ বলেন, ভূমি পরীক্ষা বা সয়েল টেস্টের জন্য় বিশেষজ্ঞদের আনা হোক। পাশাপাশি, ফাটল ধরা বাড়িগুলির স্বাস্থ্য়পরীক্ষা, এলাকার নিকাশি ব্য়বস্থা, সমীক্ষার ডিজাইন, সেটেলমেন্ট মনিটরিং রিপোর্ট জমা করতে হবে কেএমআরসিএলকে। একই সঙ্গে গ্রাউটিং ও পোস্ট গ্রাউটিং রিপোর্টও জমা করতে হবে। দুর্গা পিতুরি লেনের মাটির নীচে বেশ কয়েকটি টানেলের মুখ থেকে জল বেরনোর জেরেই বিপত্তি তৈরি হয়। দফায়-দফায় গ্রাউটিংয়ের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় আপাতত জল বেরনো বন্ধ হয়েছে। গ্রাউটিং হল এমন এক পদ্ধতি যেখানে জল ও সিমেন্টের একটি মিশ্রণ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই মিশ্রণ মাটির নীচে পাঠানো হলে মাটির নীচের অংশ দৃঢ় হয়। আলা মাটি বা মাটিতে জল বেশি থাকলে গ্রাউটিং করে সেটা ঠিক করা হয়। এই গ্রাউটিংয়ের কাজ কতদূর হল তা খতিয়ে দেখতে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কলকাতা পুরসভা।
বউবাজারের (Bowbazar) দুর্গা পিতুরি লেনের মাটির স্বাস্থ্য নিয়ে আগেও কথাবার্তা হয়েছে। সয়েল স্পেশালিস্টরা আগেই বলেছিলেন, ওই এলাকায় মাটির ‘লিক্যুইফ্যাকশন’ বেশি, মানে হল মাটি ভঙ্গুর, জলের সংস্পর্শে এলেই মাটি খুব তাড়াতাড়ি তরল হয়ে যাবে। এমনিও মাটির নীচে মাটির নীচে নিকাশি, জলের পাইপলাইন, বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। ওই এলাকার নিকাশি ব্য়বস্থার হাল কেমন সেটাও একটা বড় ব্য়াপার। পাইপলাইন বা টানেলের মুখ থেকে জল বেরিয়েই মাটি আরও দুর্বল হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই মাটি পরীক্ষা করার জন্য ভূমি বিশেষজ্ঞদেরই দরকার। তাছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে, যে এলাকার মাটি দুর্বল আবার একাধিক বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে, সেখানে সুড়ঙ্গ-খননের আগে সেই চরিত্রগত বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল কিনা। বউবাজারের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় টানেল বোরিং মেশিন যে গতিতে চালানোর কথা ছিল, তা নিয়ম মেনে হয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুরসভা। কারণ মাটি ভঙ্গুর হলে মেশিনের কম্পনে মাটির ওপরের কাঠামোগুলোরও ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়, যা হয়েছে দুর্গা পিতুরি লেনের বাড়িগুলিতে।
এদিন মেয়র বলেন, “ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় যাদের রুটিরুজি ব্যাহত হচ্ছে, তাদের জীবিকার বিষয়টি দেখবে কেএমআরসিএল। মাটি পরীক্ষার কাজ চলবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ওই অঞ্চলের সার্ভে হবে। সার্ভে করছে পুরসভাও।’ তাঁর কথায়, মেট্রোর কাজের জন্য এখনও ২৩টা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। আরও ৮-৯টা বাড়ি বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়।”