
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পশ্চিম বর্ধমান: ঠিক যেন বলিউডের হিন্দি সিনেমা। একে কমপ্লিট লকডাউন। শুনশান করছে এলাকা। তার উপর অঝোরে টানা বৃষ্টি। রাস্তাঘাটে একটাও লোকের দেখা পাওয়া ভার। এরকম সুবর্ণসুযোগ কি ছাড়া যায়? ফলে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই কাজে নেমেছিল মাফিয়ারা। আর সেই মাফিয়াদের ধরতেই সটান নদীতে নেমে পড়লেন বিডিও। এমনই টানটান রুদ্ধশ্বাস দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন গতকাল আসানসোল জামুরিয়ার মানুষ।
রাজ্যজুড়েই চলছে সাপ্তাহিক লকডাউন। ভরা বর্ষাকাল। তার উপর টানা কয়েক দিন ধরে চলছে নিম্নচাপের বৃষ্টি। দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের জীবন। অতিবৃষ্টিতে নদীর জলও কানায় কানায় ভর্তি। কিন্তু তাই বলে কি কাজ বন্ধ রাখলে চলবে বালি মাফিয়াদের? বেআইনি কাজে অল্পবিস্তর জীবনের ঝুঁকি তো থাকবেই। একরকম প্রাণের মায়া ত্যাগ করেই ভরা অজয়ের জলে একের পর এক গাড়ি নামিয়েছিল তারা। উদ্দেশ্য, নদীগর্ভ থেকে বালি তোলা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে এমনই অভিজ্ঞতা হল সরকারি আধিকারিকদের।
জামুড়িয়া বিধানসভার অন্তর্গত শ্যামল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভুড়ি এলাকায় অজয় নদীর প্রায় মাঝ বরাবর বালি মাফিয়ারা গাড়ি নামিয়ে বালি তুলছিল নদীর বুক থেকে। সে সময় হঠাৎ সেখানে অভিযানে চলে যান জামুড়িয়ার বিডিও কৃশানু রায়। সঙ্গে ছিলেন ভূমি দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ অনিমেষ চক্রবর্তী সহ অন্যান্য আধিকারিকেরাও। ভরা অজয়ের বুকে বালি মাফিয়াদের কাছে পৌঁছতে আধিকারিকদের প্রায় এক গলা জলে নামতে হয়েছিল বলে জানান জামুড়িয়ার ভূমি কর্মদক্ষ অনিমেষ চক্রবর্তী।সে সময় মাঝ নদীতে এক ডজনেরও বেশি গাড়ি ছিল। কিন্তু অভিযানের কথা কোনোভাবে চাউর হয়ে যেতেই মাফিয়ারা গাড়ি নিয়ে গা ঢাকা দেয়।
অনিমেষ বাবু জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা কোনওরকমে মাফিয়াদের দুটি গাড়িকে সিজ করতে পেরেছেন। কিন্তু নদীর জলের সুযোগ নিয়ে অন্যান্য গাড়িগুলো পালিয়ে যায়। নদীতে এত জল থাকা সত্ত্বেও কিভাবে বালি মাফিয়ারা ভরা বর্ষায় নদীর বুক থেকে বালি তুলছিল, সে কথা ভেবেই গা শিউরে উঠছে বলে জানান অনিমেষ বাবু। এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে জামুড়িয়ার বিডিও কৃশানু রায় জানান, যখনই তাঁদের কাছে এই ধরনের অভিযোগ এসেছে,তাঁরা অভিযানে সামিল হয়েছেন। বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযান জারি থাকবে। কোন অবস্থাতেই অজয় নদী থেকে নিয়ম ভেঙে মাফিয়াদের বালি তুলতে দেওয়া হবে না বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিডিও সহ প্রশাসনের এ ধরনের অভিযানে স্বাভাবিকভাবেই এলাকাবাসী খুব খুশী।