
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিহারের (bihar) রাজনীতিতে ক্রমেই কোণঠাসা হচ্ছেন নীতীশ কুমার। একদিকে, শাসক জোটের বড় শরিক আরজেডির একাংশ দাবি তুলেছে, নীতীশ এবার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি তেজস্বীর হাতে তুলে দিন। নিজের দল জেডিইউর একাংশ তাঁর সরকারের কাজকর্মের বিরুদ্ধে সরব। আর পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে জোট ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ায় বিজেপি তাঁকে পদে পদে অসম্মানের রাস্তায় হাঁটছে ।
ভাগলপুরে বিহার বিজেপির (Bjp) রাজ্য কার্যকারণী কমিটির বৈঠকে নীতীশ কুমারের নিন্দা করে প্রস্তাব পাশ করেছে দল। গত বছর অগাস্টে আচমকাই নীতীশ বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে দিয়ে লালুপ্রসাদের দল আরজেডির সমর্থনে সরকার গড়েন।
সেই থেকে জেডিইউ নেতার বিরুদ্ধে খড়গহস্ত বিজেপি এবার তাঁকে চরম অসম্মান করল। জোট ভেঙে দেওয়ার দায় দলগতভাবে জনতা দল ইউনাইটেডের ঘাড়ে না চাপিয়ে বিজেপি কাঠগড়ায় তুলেছে নীতীশকে। প্রস্তাবে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একজন বিশ্বাসঘাতক। তিনি বিজেপিকে যেমন ঠকিয়েছেন, তেমনই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানি, নরেন্দ্র মোদীকে। এমনকি তাঁর রাজনীতির সহযাত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকেও ঠকিয়েছেন। তিনি বেইমান।
বিহার বিজেপি প্রস্তাবে সংকল্প করেছে, ভবিষ্যতে কোনও পরিস্থিতিতেই তাঁরা নীতীশ কুমারের সঙ্গে হাত মেলাবে না। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিজেপির প্রস্তাবে জেডিইউ-কে কোনওভাবেই নিশানা করা হয়নি। কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে শুধুই নীতীশকে।
বিজেপি সত্যিই এমন প্রস্তাব দলে গ্রহণ করেছে কিনা তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। আজ বিজেপির প্রবীণ নেতা সুশীল কুমার মোদী জানিয়েছেন, হ্যাঁ, এমন প্রস্তাব গ্রহণ করেছি আমরা।
বিজেপির সঙ্গে জোট থাকাকালে বহু বছর নীতীশের মন্ত্রিসভার উপ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সুশীল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কও মধুর। কিন্তু দলীয় কারণে ইদানীং নীতীশের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন এই গেরুয়া নেতা। নীতীশের শিবিরে বিরোধ উসকে দিতেই লালুপ্রসাদকেও তিনি ঠকিয়েছেন বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে বিজেপি, মনে করছে বিহারের রাজনৈতিক মহল।
বিজেপি নেতা প্রস্তাব গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে জানাতেই নীতীশ আজ সাংবাদিকদের ডেকে লালুপ্রসাদকে নিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টায় নামেন। বলেন, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে লালুপ্রসাদকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিয়েছে বিজেপি। আরও বলেন, লালুপ্রসাদের সঙ্গ ছেড়ে বিজেপির হাত ধরা আমার ভুল হয়েছিল।
নীতীশের দাবি, বিজেপির অনুরোধেই তিনি পদ্ম শিবিরের সঙ্গে জোট করে সরকার গড়েছিলেন। কিন্তু তাঁর পরম বন্ধু লালুপ্রসাদই।
বিজেপির প্রস্তাব এবং নীতীশের জবাব ঘিরে বিহারের রাজনীতি আরও চড়েছে। এমনিতেই বিহারের রাজনীতির পিচে আচমকা প্রবল ঘূর্ণি তৈরি হয়েছে। নীতীশের সরকারের আয়ু নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। আরজেডি, এবং জেডিইউর একাংশ আপাত অসম্ভব একটি জোটের সম্ভাবনার কথা বলছেন। তাদের বক্তব্য, বাবা লালুপ্রসাদ ছোট ছেলে তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে মুখিয়ে আছেন। অসুস্থ লালুপ্রসাদ চিকিৎসার জন্য এখন সিঙ্গাপুরে ছোট মেয়ের কাছে আছেন। তাঁর রাজ্যে ফেরার দিন এগিয়ে আসছে।
এরই মধ্যে নীতীশের দলের একাংশ বেরিয়ে গিয়ে তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইছে। যে সরকারকে বিজেপি প্রয়োজনে সহযোগিতা করবে বিধানসভায় আস্থা ভোটে অংশ না নিয়ে। এই সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে লালুপ্রসাদের বড় ছেলে তথা মন্ত্রী তেজপ্রতাপ এবং আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝাঁ পাটনায় সুশীল মোদীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করায়। বৈঠকের কথা গোপন রাখার চেষ্টা হলেও তা জানাজানি হয়ে যায়।
বিজেপির আশু লক্ষ্য, নীতীশ কুমারকে যেভাবেই হোক বিহারের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক এবং নিঃসঙ্গ করে দেওয়া। সেই সুযোগে জেডিইউর ভোট ব্যাংক নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা লক্ষ্য তাদের।
বিজেপির অঙ্ক, তেজস্বী সরকার গড়লেও এক বছরের বেশি টিকবে না। কারণ, কংগ্রেস ও বামেরা আরজেডির পাশ থেকে সরে যাবে। সেক্ষেত্রে আগামী বছর লোকসভার সঙ্গেই বিধানসভার অন্তর্বর্তী নির্বাচন করিয়ে নেওয়া যাবে।
তবে সবই নির্ভর করছে লালুপ্রসাদ রাজ্যে ফিরে কী করেন তার উপর। ছেলেকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে দেখতে তিনি শেষ বয়সে এসে বিজেপির সঙ্গে আপস করেন কিনা সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।