
১৫ দিন পরে ছবিটা খানিক বদলালেও, এখনও সমস্ত জল সরেনি। খানিক কমেছে কেবল। জমিগুলিতে এখনও হাঁটুজল, কোনও কোনও নিচু বাড়ি এখনও অর্ধেক ডুবে। ভাঙা বাঁধের এপার ওপার ঠাহর হয় না, কোনটা নদীর কিনার আর কোনটা জমা জল! থেকে থেকে জলের মাঝে দাঁডিয়ে থাকা সুন্দরী গাছের দল চিনিয়ে দেয় জমি। এই পরিস্থিতিতে আরও এক ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে সুন্দরবন ও উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ। কাল, শুক্রবার পূর্ণিমা। ভরা কোটাল। আর সেই কারণে নদীতে জল বেড়ে নতুন করে বিপত্তি বাড়তে পারে ভাঙা বাঁধ নিয়ে বিধ্বস্ত সুন্দরবনে।
বুধবারই নবান্ন থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে৷ বাঁধ সারানোর চেষ্টা চলছে৷ স্থানীয়রা বলছেন, এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। এমনিতেই বন্যায় ডুবে আছে চতুর্দিক, তার ওপর যদি আবারক বান আসে, তাহলে ক্ষতি সামাল দেওয়াই মুশকিল হয়ে যাবে। ভরা কোটালের জলপ্লাবনকে স্থানীয় ভাষায় ‘বান আসা’ই বলে থাকেন তাঁরা।
অভিজ্ঞতা বলছে, এই সময়ে নদীর জল ফুলেফেঁপে ওঠে, অনেকটা উপচে পড়ে ঢেউ। বাঁধে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যায়। কিন্তু এবার তো বাঁধ সব ভাঙা! ফলে আবার নতুন করে জল ঢুকে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে আছেন সকলে। শুধু তাই নয়, কলকাতা থেকে ত্রাণ নিয়ে আসা বহু মানুষকে এই সপ্তাহান্তে এলে একটু খবর নিয়েও আসতে বলেছেন তাঁরা। জল বাড়লে ফের বিপদ।
যদিও এই পরিস্থতিতে বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। যে নিরাপত্তা মানুষের তৈরি করা বাঁধ দিতে পারেনি, তা আজন্মকাল ধরে দিয়ে আসছে এই জমাট অরণ্য। প্রকৃতির সমস্ত ঝড়ঝাপটা নিজের বুক দিয়ে আগলাচ্ছে। কিন্তু মানুষের অধিগ্রহণ ক্রমেই বেড়ে চলায় সে অরণ্যে কোপ বসেছে অনেকটাই। বৃক্ষের সংখ্যা কমে যাওয়াও এত দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতির একটা বড় কারণ সুন্দরবনে।
সাম্প্রতিক ঝড়ের সে সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি সামলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় লড়াই করছে সুন্দরবন। সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণের ভরসায় হাঁড়ি চড়ছে অনেকের বাড়িতে। অনেকেই ত্রিপল-বাঁশ দিয়ে মেরামত করছেন ভাঙা ঘর। পাশাপাশি চলছে গ্রামবাসীদের পুকুরগুলি সংস্কারের কাজ। নোনা জলে ভরে গেছে সব। তাই জল সেঁচে, তলায় চুন ছড়িয়ে, পাড়গুলি মাটি দিয়ে উঁচু করে, ফের বৃষ্টির জলে ভরবে সেগুলি। তবে সে জল ব্যবহারের উপযোগী হবে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এই কাজে হাত লাগিয়েছে। কিন্তু ভয়, বান এসে আবার না সব নষ্ট করে দেয় সমস্ত চেষ্টা।
বৃহস্পতিবার থেকেই আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে গুড়গুড় করে ডাকছে। এখই মেঘ ঘনাচ্ছে মানুষের মনেও। গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া এলাকার বিশ্বজিৎ গিরি যেমন বলছিলেন, “সব্জি-ফসল সব ভেসে গেছে। পুকুরের সব মাছ মরে গেছে। এবার আর আদৌ আর কিছু চাষ হবে কিনা জানি না। জমি থেকে জল নামছে সবে। এবার যদি ফের বান এসে ভাসায়, তাহলে আবারও ভরে যাবে সব। আবার কবে যে নদীবাঁধগুলো জুড়বে!”
যদিও সরকারের তরফে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার। কিন্তু প্রকৃতির চোখরাঙানির কাছে সে সবই খুব ক্ষুদ্র। পঞ্জিকা মতে পূর্ণিমা শুরু হচ্ছে আগামীকাল, শুক্রবার বিকাল ৩টে ১৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে। পূর্ণিমা শেষ হবে শনিবার রাত ১২ টা ৪৪ মিনিট ৫ সেকেন্ডে৷ এই গোটা সময়টাতেই ভরা কোটালে জল বাড়ার আশঙ্কা পুরোদমে।