Latest News

দুর্গাপুরের বিকাশ করোনা ভয়ে ঘরবন্দি তেহরানে, শেষ হয়ে আসছে খাবার

দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফিরতে পারছে না ছেলে। প্রতিদিন ভিডিও কলে ছেলের মুখটা দেখেই  আশায় বুক বাঁধছেন বাবা-মা।  ইরানে মহামারীর আকার নিয়েছে করোনাভাইরাস। সে দেশেই এখন ঘরবন্দি ছেলে। বাতিল হচ্ছে একটার পর একটা বিমান। বাড়ির বাইরে পা রাখাও প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে খাবার ভাঁড়ারেও টান পড়ছে। রাস্তায় বার হলে ভাইরাসের আতঙ্ক। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছে দুর্গাপুরের বিকাশ দাস। আর ছেলের চিন্তায় খিদে, ঘুম ভুলেছে পরিবার।

শঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে দুর্গাপুরের বেনাচিতির দাস পরিবারে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিষ্ণুপদ দাসের ছেলে বিকাশ তিন বছর ধরে রয়েছেন তেহরানের পারান্দা শহরে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। বিষ্ণুপদবাবু জানিয়েছেন, পারান্দা শহরের একটি বাড়িতে  তাঁর ছেলেকে নিয়ে মোট ২৫ জন থাকেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জন ভারতীয়। বাকিরা পাকিস্তান, নেপালের বাসিন্দা। কয়েকমাস আগেই বাড়ি ফিরেছিল বিকাশ। এর মধ্যে ফের বাড়ি আসার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু করোনার সংক্রমণ এতটাই প্রাণঘাতী হয়ে গেছে ইরানে, যে তাঁর বাড়ি ফেরার সব রাস্তাই কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

‘‘প্রতিদিন ভিডিও কলেই ছেলের সঙ্গে কথা হয়। ওরা মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছে। বাড়ি থেকে বেরোতেও পারছে না,’’ বলেছেন বিকাশের বাবা বিষ্ণুপদবাবু।  ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করার পরে তিন বছর আগেই তেহরানে পাড়ি দেন বিকাশ। তাঁর সঙ্গেই পারান্দায় আটকে পড়েছেন দক্ষিণ কলকাতার আরও এক যুবক।

ভিডিও কলে বিকাশ বলেছেন, ‘‘ইমাম খোমেইনি বিমানবন্দরের কাছে পারান্দা শহরের একটি আবাসনে আমরা আটকে রয়েছি। আমাদের সঙ্গে আরও ২৫ জন গৃহবন্দি। আমাদের কাছে দশ দিনের মতো খাবার মজুত ছিল। সেই খাবার ফুরিয়ে আসছে। এদিকে বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় লাগছে। ’’ গতমাসেও পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না, জানিয়েছেন বিকাশ। গত দু’সপ্তাহ ধরে ইরানে শুরু হয়েছে মৃত্যুমিছিল। পারান্দা শহরের কাছেই অন্য একটি শহরে করোনার সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়েছে। বিকাশ বলেছেন, দুবাই হয়ে দেশে ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু সেই বিমান বাতিল হয়ে গেছে। অন্যদেশ হয়ে ফেরার চেষ্টাও করছেন তাঁরা, কিন্তু লাভ হচ্ছে না। দিনকয়েক ধরে সব দেশই উড়ান বাতিল করে দিচ্ছে। ‘’ইরানের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এখনও আমাদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি,’’ দাবি বিকাশের।

ইরানে করোনার সংক্রমণ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তেহরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই দেশে ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৭৭ জনের।  সংক্রামিত আড়াই হাজারেরও বেশি। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে পার্লামেন্টের ২৩ জন সদস্য। সে দেশের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়াও সংক্রামিত  ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকর। ইরানি পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির প্রধান মজতুবা জলনৌরেরও আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। সংক্রমণ নাকি ছড়িয়েছে ইরানের জেলগুলিতেও। জরুরি অবস্থা জারি করে প্রায় ৫৪ হাজার বন্দিকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছে ইরান সরকার। সব মিলিয়ে তাই পরিস্থিতি যথেষ্টই শঙ্কাজনক।

এদিকে ছেলের চিন্তায় পথ চেয়ে বসে বৃদ্ধ বাবা-মা। বিষ্ণুপদবাবু বলেছেন, প্রতিটা দিন নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। কীভাবে ছেলেকে ফিরিযে আনবেন বুঝতেই পারছেন না বৃদ্ধ বাবা।

দুর্গাপুরের একটি বোরোর চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ হালদার বলেছেন, ‘‘বিষ্ণুপদবাবু ও তাঁর ছেলে বিকাশকে দীর্ঘদিন ধরেই চিনি। এই বিপদের মুহূর্তে অসহায় পরিবারের পাশে আছি আমরা। সব চিঠিপত্র তৈরি করে মহকুমা শাসককে পাঠানো হয়েছে। তিনি প্রশাসনিক স্তরে যতটা সাহায্য করা যায় করবেন বলেছেন।’’

‘‘প্রশাসন সাহায্য করবে বলেছে। ওরা বলেছে যে কোনও উপায় ছেলেকে ফিরিয়ে এনে দেবে। আমরা আশা করে রয়েছি,’’ অপেক্ষার দিন গুনছেন বৃদ্ধ বাবা-মা।

You might also like