
রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের দক্ষিণ শাখার বালিগঞ্জ জংশন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, নামখানা, কাকদ্বীপ, লক্ষীকান্তপুর, ডায়মন্ড হারবারের মতো দূরবর্তী এলাকার হাজারে হাজারে মানুষ প্রতিদিন কাজের জন্য বালিগঞ্জ স্টেশনে নামেন। এখান থেকে তাঁরা দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েন। এমনকি দক্ষিণ শহরতলির বজবজ, বাটানগর প্রভৃতি এলাকা ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার নানা অংশের অসংখ্য মানুষও প্রতিদিন এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে লোকাল ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও আশ্চর্যজনকভাবে বালিগঞ্জ স্টেশনে আরপিএফ বা জিআরপিকে দেখা যাচ্ছে না। বালিগঞ্জ জংশনের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি রেলস্টেশন কী করে অরক্ষিত অবস্থায় থাকছে, তা নিয়ে যাত্রীমহলে প্রশ্ন উঠেছে।
এমনিতেই দ্রুত কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য অথবা বাড়ি ফিরে দ্রুত সংযোগকারী বাস-অটো ধরার তাগিদে অনেকেই ট্রেনের একেবারে দুই প্রান্তের কামরায় ওঠার চেষ্টা করেন। তাই সেখানে হুড়োহুড়ি বেশি হয়। স্টেশনে ট্রেন ঢুকলেই হুড়োহুড়ির মাত্রা একধাক্কায় বেড়ে যায়। কিন্তু নিরাপত্তার বালাই না থাকায় যেকোনও মুহূর্তে প্রাণ যেতে পারে যাত্রীদের। অথচ এখানেই আছে জিআরপি থানা। রেলপুলিশ স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলে যাত্রীদের এই হুড়োহুড়ি কিছুটা অন্তত নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু নিরাপত্তার বালাই না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। যখন তখন যে কেউ দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারেন। তবু হুঁশ নেই রেল দফতরের!
সেই সঙ্গে আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা স্টেশন চত্বর। সর্বত্র জঞ্জালের ছড়াছড়ি। তার ওপর একমাত্র চলমান সিঁড়িটিও হামেশাই বন্ধ থাকে। ফলে বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ যাত্রীদের সিঁড়ি ভেঙে ওঠানামা করতে যথেষ্ট অসুবিধায় পড়তে হয়। আবার যাত্রীদের একাংশ করোনা বিধিও মানছেন না। বিষয়টি নিয়ে ট্রেনের ভেতরকার ঘোষণা ছাড়া রেলের তরফে আর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না। যাত্রীদের অনেকেই রেল কর্তৃপক্ষের এই ঢিলেঢালা মনোভাব নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাঁদের বক্তব্য, রেলের গাফিলতি নিয়ে বলতে গেলেই তেড়ে আসেন রেল কর্মচারী এবং রেলপুলিশ। তাঁরা প্রতিবাদকারী যাত্রীদেরই আইনি ঝামেলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান এবং হেনস্থা করেন। ফলে সাধারণ যাত্রীরাও উটকো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে চুপ থাকেন। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে কোনওদিন বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তখন হয়তো কানে জল যাবে রেল কর্তৃপক্ষের।