
আউশগ্রামে প্রার্থী হয়েছেন শুনেই কলিতা ছুটলেন কাজের বাড়ি, ছুটি নিতে হবে যে
“ছুটি না পেলে ভোটের কাজ করি কী করে বলুন তো?” দুশ্চিন্তা ঝরে পড়ে কলিতার গলায়।
স্বামী পাইপলাইনের মিস্ত্রি। যা আয় করেন তাতে সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে তিন বাড়ি বাসন মাজা-ঘর মোছার কাজ নিয়েছেন কলিতা। বাড়ি বাড়ি কাজ, তারপর নিজের স়ংসারের দেখভাল করতে করতেই কেটে যায় দিন। সেই দৈনন্দিন জীবনে এবার নয়া চমক। সে সব ফেলে এবার ফ্ল্যাগ ফেস্টুন নিয়ে নিজের জন্য ভোট চাইতে যাবেন কলিতা মাঝি।
তীব্র দারিদ্র্যের কারণে কলিতার পড়াশোনা বেশিদূর হয়নি। প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি টপকানোর আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাঁকে। বিয়ের পরেও দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী। স্বামীর রোজগারে সংসার চলে না।
তাই কলিতা বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। বিধানসভা ভোটে সেই কলিতাকেই করল বিজেপি। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে(তফসিলি জাতি সংরক্ষিত আসন) বিজেপি প্রার্থী হিসেবে কলিতা মাঝির নাম ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নাম ঘোষণার পরেই বিজেপি প্রার্থী কলিতা মাঝি সটান হাজির হন বিজেপির কার্যালয়ে। তাঁকে শুভেচ্ছা জানান দলের কর্মী সমর্থকরা।
গুসকরা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝপাড়ার বাসিন্দা কলিতা মাঝির স্বামী সুব্রত মাঝি জলের পাইপলাইনের মিস্ত্রির কাজ করেন। এক ছেলে পার্থ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
মঙ্গলকোটের কাসেমনগরে বাপেরবাড়ি কলিতাদেবীর। বাবা মধূসুদনবাবু মারা গিয়েছেন। ৭ বোন এক ভাই। বাবা জনমজুরি করতেন। কলিতা মাঝি বলেন, “টাকার অভাবে পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারিনি। এই আফসোস সারাজীবন থাকবে। তবে ভোটে জিতলে আমি গরিব ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।গরিব হওয়ার যন্ত্রণা আমি বুঝি।”
বিজেপির আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকার সহ আহ্বায়ক চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দল গরিব মানুষের স্বার্থে লড়াই করে। একজন সামান্য পরিচারিকাকে প্রার্থী করে দল সেটাই বুঝিয়ে দিল। আমাদের প্রার্থী জয়ী হবেন।এটা আমরা নিশ্চিত।” গুসকরা শহরের বিজেপি নেতা নিত্যানন্দ চ্যাটার্জী বলেন, “বিজেপি জিতবে।কারণ মানুষ বিজেপির সঙ্গে আছে।”
আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অভেদানন্দ থাণ্ডার বিজেপির প্রার্থী কলিতা মাঝিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “এখানে উন্নয়নের নিরিখে মানুষ ভোট দেবে।গত পাঁচ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্যই আউশগ্রামের বাসিন্দারা ঘাসফুল চিহ্নে ভোট দেবেন।”