
হাসপাতাল থেকে চুরি হল সদ্যোজাত, চোর ধরতে গিয়ে সেও এক নাটক !
দ্য ওয়াল ব্যুরো, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত এক শিশু চুরিকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ালো বকুলতলা থানার নিমপীঠ শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতালে। তিন ঘণ্টার মধ্যে পুলিশি তৎপরতায় চুরি যাওয়া শিশু উদ্ধার হলেও আইনি জটিলতায় তাকে মায়ের কাছে পৌঁছতে গড়িয়ে যায় রাত।
বুধবার সকালে প্রসব বেদনা ওঠায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সরবানু লস্করকে নিমপীঠ শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর স্বামী কুলতলির নলগোরা অঞ্চলের ৮ নম্বর সোনাটিকারি গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন লস্কর। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সঙ্গে সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা ওই বধূকে ভর্তি করে নেন। অল্পক্ষণের মধ্যেই সরবানু লস্কর এক কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এরপর লেবার রুম থেকে সরবানু ও তার সদ্যোজাত শিশুকে হাসপাতালের বেডে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসক এবং নার্সরা সময়মতো এসে সরবানু ও তাঁর সদ্যোজাত শিশুর দেখভালও করেন।
অভিযোগ, বিকেল ৫টা নাগাদ এক মহিলা নিজেকে ওই হাসপাতালের নার্সের পরিচয় দিয়ে ইঞ্জেকশন দিতে হবে বলে জানিয়ে সরবানুর কোল থেকে তার সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এরপর দীর্ঘক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও কোলের সন্তানকে ফেরত না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সরবানু। কান্নাকাটি শুরু করে দেন তিনি। খবর পেয়ে বাইরে অপেক্ষারত সরবানুর পরিবারের লোকজন ছুটে আসেন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান তাঁরা। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি।
উদ্বেগ ছড়ায় গোটা হাসপাতাল চত্বরে। ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় পুলিশ। হাসপাতালের বাইরে জয়নগর কুলতলি যাওয়ার রাস্তাতেও খোঁজখবর শুরু হয়। এক অটোচালক জানায়, কিছু সময় আগেই শিশু কোলে এক মহিলাকে জয়নগরে নামিয়ে এসেছেন তিনি। এ কথা জানতে পেরেই ওই অটো চালককে নিয়ে জয়নগরে যেখানে ওই মহিলাকে নামানো হয়েছিল সেখানে যায় পুলিশ। সেখানে একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় সদ্যোজাত ওই শিশুকে।
ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয় এরপরেই। পুলিশের জেরায় ওই মহিলা দাবি করেন, শিশুটি তাঁরই। ওই মহিলার স্বামীও দাবি করতে থাকেন, বুধবার সকালে তিনি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে যান। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর স্ত্রীকে একটি ইঞ্জেকশন দেন এবং স্থানীয় কোনও হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন। এরপর তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে নিমপীঠ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং সেখানেই তাঁর স্ত্রী এক কন্যা সন্তান প্রসব করেন। জোর গলায় তাঁরা দাবি করেন, ওই শিশুটি তাদেরই।
বিপাকে পড়ে যায় বকুলতলা এবং জয়নগর থানার পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ওই মহিলাকে আটক করে এবং সদ্যোজাত শিশুটিকে একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। এ দিকে ততক্ষণে নিমপীঠ শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতালের সামনে আলাউদ্দিন লস্করের আত্মীয় পরিজনরা বাচ্চা ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে দেন।
এরপর জয়নগর থেকে আটক হওয়া মহিলা সত্যিই অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন কি না বা সদ্যোজাত শিশুটি তাঁর কিনা তা জানার জন্য রাতেই তাঁকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, ওই বধূ অন্তঃসত্ত্বা। তখনই বোঝা যায়, কোনওভাবেই শিশুটি তাঁর হওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ নিশ্চিত হওয়ার পর উদ্ধার হওয়া শিশুকে রাতেই নিমপীঠ শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু জয়নগরের ওই বধূ কি কারণে নিমপীঠ গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি করে নিয়ে এলেন এবং কেনই বা তিনি ও তাঁর স্বামী মিথ্যা দাবি করলেন, তা এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। তদন্ত শুরু করেছে বকুলতলা থানার পুলিশ।