
মাঘমেলা না হওয়ার দুঃখ যেন সবলা মেলা দেখেই দূর করছেন শহরবাসী। মেলা ঘুরলে এমন একাধিক বিক্রেতাদের পাওয়া যাবে যাঁরা অন্যান্য বছর মাঘমেলায় জিনিস বিক্রি করেন। অন্তত একটা মেলা তো হচ্ছে তাতেই কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বিক্রেতারা।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বীরভূম জেলা সবলা মেলা। বীরভূম জেলা প্রশাসন এবং বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক সহযোগিতা করছে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে। জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লক থেকেই একাধিক স্টল রয়েছে এই মেলায়। ৫০টি স্টলের কোনওটিতে হাতের কাজ, কোনওটিতে আবার খাবারের জিনিস নিয়ে বসেছেন সবলারা। জেলার বাইরের স্টলও রয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে রায়বেঁশে, মুখোশনৃত্য, নাটক সহ একাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর ফলে কিছুটা হলেও মাঘমেলার আমেজ আসছে বলেই দর্শনার্থীদের মত। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামীকাল, ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে সবলা মেলা।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুদিনের স্বপ্ন পল্লী-পুনর্গঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ১৯২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুঠিবাড়িতে শুরু হয়েছিল ইনস্টিটিউট অফ রুরাল রিকনস্ট্রাকশনের কাজ। পরবর্তীকালে সেটিই শ্রীনিকেতন হিসেবে পরিচিতি পায়, প্রাণ পেতে থাকে কবিগুরুর গ্রামীণ ভাবনা। পরের বছর অর্থাৎ ১৯২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসব হয়। তখন থেকেই প্রতি বছর ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীনিকেতনের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে শুরু হয় শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসব যা গ্রামীণ এলাকায় কুঠি’র মেলা নামেও পরিচিত। এ বছর ৯৯তম বার্ষিক উৎসবে ছেদ পড়ল মেলায়।
সবলা মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানালেন, শ্রীনিকেতন মেলা পৌষমেলার তুলনায় অনেকখানি আলাদা। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড় থাকে না, তেমন লোক সমাগম হয় না, কাজেই আগাগোড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলার প্রয়োজন হয় না। তবে দোকানগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তার বদলে সুন্দরভাবে মেলাটাকে সাজানোই যায় ঠিক যেমনটা সবলা মেলাকে সাজানো হয়েছে। একদল দর্শনার্থীর মত, মাঘমেলাকে পৌষমেলার মতো সাজিয়ে ফেললে সেটাও কর্পোরেট মেলা হয়ে যাবে। তার থেকে নিজস্বতা নিয়েই থাকুক। আগামী বছর, শতবর্ষে মাঘমেলায় মেতে ওঠার আশাতেই থাকবেন তাঁরা।
মেলা ঘুরে এমন একাধিক বিক্রেতার দেখা মিলল যাঁরা অন্যান্য বছর মাঘমেলায় বসেন। এবার সেই মেলা হয়নি। একই সময়ে চলছে সবলা মেলা। তবে সবলা মেলার তুলনায় মাঘমেলাতেই তাঁদের বিক্রি বেশি হয় বলে জানালেন। এক সবলার কথায়, “২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন মেলাতে জিনিস বিক্রি করি। পুরো একটা বছর কোথাও মেলা না হওয়ায় খুব সমস্যা হচ্ছিল। অন্তত এক জায়গায় তো বসতে পেলাম।’’ আরও এক বিক্রেতা বললেন, ‘‘হঠাৎ করেই সবলা মেলা হবে বলে জানতে পারি। সেরকম প্রস্তুতিও ছিল না। এই জাতীয় মেলার আগে থেকেই যদি প্রচার করা হয় সেক্ষেত্রে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে, বিক্রিও বেশি হবে।’’