
সুকমল শীল
সংস্কারের অভাবে ভেঙেচুরে পড়ছে কলকাতার (Kolkata) ঐতিহ্যবাহী গঙ্গার (Ganga) বহু ঘাট। বেশিরভাগ ঘাটেরই দেওয়াল ফেটে বেড়ে উঠেছে বট-অশ্বত্থ। নোংরা (Garbage) জমে কার্যত নরককুণ্ডে পরিণত হয়েছে প্রাচীন ঘাটগুলি। অথচ পুরনো চেহারা ফিরলে কলকাতার দর্শনীয় জায়গার তালিকায় স্থান পেতে পারে সেগুলি।
সোমবার কুমোরটুলি ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, সংস্কারের অভাবে মলিন ঘাটের চেহারা। তারই মধ্যে চলছে স্নান। এলাকার লোকজন জানালেন, এই ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে কলকাতা পুরসভার। কিন্তু কোনও সংস্কার হয়নি। শুধু নতুন করে পুরানো বানানের নামফলক বসানো হয়েছে।
মল্লিক ঘাটটি ১৮৫৫ সালে কলকাতার ‘বাবু’ নয়নচাঁদ মল্লিকের ছেলে রামমোহন মল্লিক তৈরি করেছিলেন। এত বছরের পুরনো মল্লিক ঘাটে প্রতিদিন ভোরে বসে ফুলের বাজার। কিন্তু এখন এই ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। কোনও এক সময় রাইটার্স বিল্ডিংয়ের মতো বেমানান লাল রং করা হয়েছিল। যে রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। ঘাটের ওপরে একটি ধর্মশালা তৈরি করা হয়েছিল নির্মাণশৈলীর তোয়াক্কা না করেই। ঘাটের ভিতরের অংশ দখল করে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে গুদাম হিসেবে ভাড়াও দিচ্ছেন। চারিদিকে নোংরার স্তুপ!
মল্লিক ঘাটের পাশেই গোয়েঙ্কা ঘাট। পুরো নাম ‘রামচন্দ্র গোয়েঙ্কা জেনানা বাথিং ঘাট’। রাজস্থান থেকে আগত ব্যবসায়ী রামচন্দ্র গোয়েঙ্কা নিজের পরিবারের মেয়েদের জন্য তৈরি করেছিলেন ওই ঘাট। এখনও রাজস্থানী শৈলীর অপূর্ব ওই স্থাপত্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্ত ভগ্নস্তূপে পরিণত হতে বসেছে ঘাটটি।
গঙ্গার তীরে, আরও একটি ছোট ঘাট হল মতিলাল শীল ঘাট। ঘাটটা চারটে কারুকার্যময় থামের উপর দাঁড়িয়ে। থামের সুদৃশ্য কারুকার্য ভেঙে পড়ছে। নামার সিঁড়িতে নোংরার পাহাড়। ভিতরটা এখন ভবঘুরেদের আস্তানা।
বাবুঘাটের সবথেকে বড় সমস্যা পরিছন্নতার। কলকাতা পুরসভার দায়িত্বে রয়েছে এই ঘাট। তা সত্ত্বেও সবসময় নোংরা জমে থাকে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। বাবুঘাটের ভেতরেই বসেন পুরোহিত সন্তোষ পান্ডা। তিনি বললেন, ‘অনেকদিন পর পর পরিষ্কার করে। অন্য সব ঘাটগুলিরও করুণ দশা। সরকার কিছুই করছে না।’
হেরিটেজ বিশেষজ্ঞ জি এম কাপুর বিষয়টিতে বললেন, ‘আমার মতে ওই ঘাটগুলি যারা ব্যবহার করছে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করা উচিত। সেইসঙ্গে কোন ঘাটের দায়িত্বে কে রয়েছে সেটা খুঁজে বের করে সংস্কারের পথ খোঁজা উচিত। আসলে সমন্বয়ের অভাবেই ঘাটগুলির এই দশা।’
পুরাণবিদ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি বললেন, ‘কলকাতায় বহু পুরোনো স্থাপত্য রয়েছে। যেগুলির সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। অনেক কিছুই আমরা রক্ষা করতে পারছি না। হেরিটেজ কমিশনের বিষয়টিতে উদ্যোগী হলে ভালো হয়। ঘাটগুলির করুণ অবস্থা আমায় কষ্ট দেয়।’
বিশিষ্ট শিল্পী ও রাজ্যের হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন বললেন, ‘বহু ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে ওই ঘাটগুলির সঙ্গে। আমরা চাই সেগুলি রক্ষা করতে। কিন্তু কোনটা পোর্ট ট্রাস্টের, কোনটা পুরসভার, তারা নিজেরাই জানে না। ওইসব জটিলতা না মেটালে কিছু করা সম্ভব নয়।’
কলকাতা পুরসভার ঘাটগুলির দায়িত্বে রয়েছেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। তাঁকে এবিষয়ে ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।