
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গতবছরের মতো এবছরও কোভিডের সমস্ত বিধি একইরকম বহাল রয়েছে। শুধু শর্তসাপেক্ষে ছাড় দেওয়া হয়েছে অঞ্জলি আর সিঁদুরখেলায়। করোনা টিকার দুটি ডোজ নেওয়া থাকলেই অংশ নেওয়া যাবে অঞ্জলি ও সিঁদুরখেলায় (Durga Puja)।
শেষমূহূর্তে আদালতের এই রায়ে খুশি হওয়ার কথা, কিন্তু খুশি হতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। টিকার ডোজ নিয়ে উৎসবে মানুষকে ভাগ করে দেওয়ায় বরং ব্যথিত তাঁরা।
মহাকাশ গবেষণায় জোয়ার আনতে জন্ম নিচ্ছে আইএসপিএ, উদ্বোধনে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী
বাগবাজার সর্বজনীনে গতবছরও আদালতের নির্দেশ মেনে অঞ্জলি, সিঁদুরখেলা হয়নি। এবছর আদালত নির্দেশ দিয়েছে করোনা টিকার দুটি ডোজ নেওয়া থাকলে অংশ নেওয়া যাবে অঞ্জলি ও সিঁদুরখেলায়। সম্পাদক গৌতম নিয়োগী বললেন, ‘আদালত ছাড় দিয়েছে শুনেছি। কিন্তু কমিটি এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিষয়টিতে বৈঠক হবে। তবে সিঁদুরখেলা ও অঞ্জলি বাঙালির আবেগের বিষয়। আমাদের এখানে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় হয়। ডবল ডোজের শংশাপত্র বা ফোনের মেসেজ দেখে অঞ্জলি বা সিঁদুরখেলায় প্রবেশধিকারের ব্যবস্থা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া উৎসবের সময় কারও মনে আঘাত দিতে চাইনা আমরা। তাই আপাতত এবছরও অঞ্জলি ও সিঁদুরখেলা বন্ধ রাখব বলে ঠিক হয়েছে।
ত্রিধারার কোষাধাক্ষ্য সন্দীপ চক্রবর্তী বললেন, ‘সব কড়াকড়ি গতবছরের মতোই রয়েছে। আদালত নতুন করে অঞ্জলি ও সিঁদুরখেলা নিয়ে কিছু না বললেই পারত।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘ওইভাবে সম্ভব না কি? যাদের ভ্যাকসিনের ডবল ডোজ নেওয়া হয়ে গেছে, শুধু তাঁরাই সিঁদুর খেলবে, অঞ্জলি দেবে। আর যাদের কোনও কারণে ডবল ডোজ হয়নি, তাঁরা দুঃখ পাবে। হলে সবার জন্য এক নিয়ম হোক। ডবল ও সিঙ্গেল ডোজের বিভাজনের চেয়ে এবছরও অঞ্জলি ও সিঁদুরখেলা বন্ধ রাখলেই ভালো হত। আমরা বন্ধই রাখছি।’
দক্ষিণ কলকাতার সমাজসেবী সঙ্ঘের সম্পাদক অরিজিৎ মৈত্র জানিয়েছেন, ‘তাঁরা সিঁদুরখেলা ও অঞ্জলির ব্যবস্থা রাখবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। যদি দেখা যায় অনেকেরই ডবল ডোজ হয়নি, তাহলে বন্ধও রাখা হতে পারে।
কলেজ স্কোয়্যারের পুজোর সম্পাদক বিকাশ মজুমদার জানিয়েছেন, তাঁরা সিঁদুরখেলার ব্যবস্থা রাখছেন না। অঞ্জলিও হবে গতবছরের মতো বিধি মেনেই। বাড়ি থেকে ফুল নিয়ে আসতে হবে। মণ্ডপের বাইরে মাইকে মন্ত্র শুনে রাখতে হবে নির্দিষ্ট ড্রামে। পরে সেই ফুল স্যানিটাইজ করে প্রতিমায় পায়ে ছুঁইয়ে আনা হবে। বিকাশবাবুর কথায়, ‘আদালতের রায় মতো সিঁদুরখেলার ব্যবস্থা করলে অনেককেই হয়ত বঞ্চিত করা হবে। আমরা সেটা চাই না।’
কুমোরটুলি পার্কও মাইকে অঞ্জলি চালিয়ে দেবে। সামনে বড় মাঠ, মানুষ মন্ত্র শুনে দূর থেকে অঞ্জলি দেবেন। ফুল নির্দিষ্ট বালতিতে রাখবেন। পরে সেই ফুল প্রতিমার পায়ে ছুইয়ে আনা হবে। তবে এবছরও সিঁদুরখেলার বন্দোবস্ত রাখছেন না তাঁরা।
হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনের সুতপা দাস বলেন, ‘আমাদের সিঁদুরখেলা শুধু কমিটির সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সকলেরই ডবল ডোজ হয়ে গেছে।’ এই পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘কার ডবল ডোজ হয়েছে, কার হয়নি তা দেখে অঞ্জলি ও সিঁদুর খেলায় অনুমতি দেওয়া হবে। তবে প্রক্রিয়াটি কী ভাবে হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।’
বিষয়টিতে সর্বভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা আকাদেমির অধ্যক্ষ ড. জয়ন্ত কুশারী জানিয়েছেন, শাস্ত্রের বিধানে আচার–আচরণই ধর্মাচরণ। আদালত রোগের কথা ভেবেই সিঁদুরখেলা ও অঞ্জলির ক্ষেত্রে ওই নির্দেশ দিয়েছে। তবে যারা এখন ভ্যাকসিন পাননি বা ভ্যাকসিনের ডবল ডোজ পাননি, সেটা তাঁদের দোষ নয়।