
দ্য ওয়াল ব্যুরো : রাশিয়ায় করোনার স্পুটনিক ভ্যাকসিন বানাচ্ছে রাশিয়ান ডায়রেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড নামে এক সংস্থা। তারা মঙ্গলবার জানিয়েছে, পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি হবে ওই ভ্যাকসিন। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে স্পুটনিক তৈরি করা শুরু হয়ে যাবে। প্রতি বছর এদেশে ৩০ কোটি ওই ভ্যাকসিন উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন বানানোর প্রযুক্তি পাঠানো হয়েছে ভারতে। সেপ্টেম্বরেই পুনেয় প্রথম ব্যাচের স্পুটনিক ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদার পুনাওয়ালা মঙ্গলবার বলেন, “আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, রাশিয়ার সংস্থার অংশীদার হিসাবে আমরা ভারতে স্পুটনিক বানাব। আগামী দিনে ওই প্রতিষেধকের লক্ষ লক্ষ ডোজ তৈরি হবে ভারতে।”
পুনাওয়ালা দাবি করেন, “কোভিড প্রতিরোধে স্পুটনিক ভ্যাকসিন যথেষ্ট কার্যকরী। ওই ভ্যাকসিন নিরাপদও বটে।” রাশিয়ান ডায়রেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সিইও কিরিল দিমিত্রভ বলেন, “সেরামের অংশীদার হতে পেরে আমরা আনন্দিত। এর ফলে ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়বে। দুই দেশ যৌথভাবে ভারত তথা বিশ্বের মানুষের জীবনরক্ষার জন্য কাজ করবে।”
সোমবার ভারতে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ৯০৬ জন। গত চার মাসে এদিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে কম।
এদিন চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, আত্মসন্তুষ্টির কারণ নেই। শীঘ্রই আসছে অতিমহামারীর তৃতীয় ওয়েভ। আইএমএ-র বক্তব্য, চিকিৎসক এবং রাজনীতিকদের যৌথ উদ্যোগে সদ্য করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ পেরিয়ে এসেছে দেশ। অতিমহামারীর ইতিহাস থেকে দেখা যায়, তৃতীয় ওয়েভ আসবেই। কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার হল, এই অবস্থায় দেশের নানা প্রান্তে জমায়েত হচ্ছে। মানুষ কোভিড বিধি মানছেন না।
আইএমএ বলেছে, “পর্যটন, তীর্থযাত্রা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সবকিছুরই প্রয়োজন আছে। কিন্তু তা কয়েক মাস বন্ধ থাকা উচিত। কারণ মানুষ যদি ভ্যাকসিন ছাড়াই বড় জমায়েত করে, তাহলে তা সুপার স্প্রেডারের ভূমিকা নেবে। কোভিডের তৃতীয় ঢেউ শুরু হবে দ্রুত।” চিকিৎসকদের মতে, গত দেড় বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে, দু’টি উপায়ে কোভিডের তৃতীয় ঢেউকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। প্রথমত, সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোভিড বিধি মেনে চলতে হবে।
উত্তর-পূর্বের আট রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত এক সপ্তাহের হিসাবে দেখা গিয়েছে, উত্তর-পূর্বের প্রতি পাঁচ জেলার তিনটিতেই কোভিড পজিটিভিটি রেট ১০ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ৫ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের মোট ৫৪ টি জেলায় পজিটিভিটির হার ১০ শতাংশের বেশি ছিল। তার মধ্যে ৩৭ টি জেলাই উত্তর-পূর্ব ভারতের।
সংখ্যার বিচারে দেশের অনেক বড় রাজ্যের তুলনায় উত্তর-পূর্ব ভারতে সংক্রমণ কম। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেশে যেখানে পজিটিভিটি রেট ২.২১ শতাংশ, উত্তর-পূর্বে সেই তুলনায় পজিটিভিটি অনেক বেশি। গত ৬ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে চিঠি দিয়ে এসম্পর্কে উদ্বেগের কথা জানানো হয়। পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব এ কে ভাল্লা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে বলেন, সেখানে আরটি পিসিআর টেস্ট আরও বাড়াতে হবে। কোভিড সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য তৈরি করতে হবে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা। হাসপাতালে বেডের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।