Latest News

আন্টার্কটিকায় আতঙ্ক, ভাঙছে দুই বিশাল হিমবাহ, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির আশঙ্কা

দ্য ওয়াল ব্যুরো: দুই বিশাল হিমবাহ। এদের নিয়েই চিন্তা ছিল বিজ্ঞানীদের। আন্টার্কটিকায় গত কয়েক বছরে যেভাবে হিমবাহ ভেঙে গলে যাচ্ছে তাতে ঘুম উড়েছে বিশ্বের তাবড় পরিবেশবিদদের। পৃথিবীর তাপ বাড়ছে, মেরুপ্রদেশে বরফ গলছে, সমুদ্রের জল বাড়ছে, জলবায়ুর বদল আসন্ন সর্বনাশের খাঁড়া ঝুলিয়েই রেখেছে। তার মধ্যেই ওই দুই পেল্লায় হিমবাহের ভেঙেচুরে যাওয়াকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

পশ্চিম আন্টার্কটিকায় উপকূল বরাবর ওই দুই হিমবাহে ভাঙন ধরেছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যেই হিমবাহ ভেঙে সমুদ্রের জলস্তর বেড়েছে। বিশাল দুই হিমবাহ পুরোপুরি গলতে শুরু করলে সমুদ্রের জলস্তর ৫ শতাংশ অবধি বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ জার্নালে এই আসন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খবর ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উপগ্রহ চিত্র দেখেই অশনি সঙ্কেত পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী কয়েক বছরে খুব দ্রুত আন্টার্কটিকার হিমবাহে ভাঙন শুরু হতে পারে। সমুদ্রে বড় বড় বরফের চাঁই ভাসতে দেখা যাবে। জলস্তর বাড়বে কয়েক ফুট।

নেদারল্যান্ডের স্যাটেলাইট এক্সপার্ট স্টেফ হারমিত্তি বলেছেন, আগেই আশঙ্কা করা হয়েছিল আন্টার্কটিকার দুই বড় হিমবাহে ভাঙন ধরতে পারে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সেই বিপদের আঁচ পাওয়া যাবে সেটা বোঝা যায়নি।

জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে উত্তর মেরুর গ্রিনল্যান্ডে। এখানেই সবচেয়ে বেশি বরফের চাদর মেরুকে ঢেকে রয়েছে। গত কয়েক বছরে বিশ্ব উষ্ণায়ণে এই বরফের চাদর গলতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সমুদ্রে ভাসমান হিমশৈলও ধীরে ধীরে গলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ সম্পূর্ণ গলে যায়, তাতে গোটা পৃথিবীতে সমুদ্রের জলস্তর গড়ে ২৩ ফুট বাড়বে। ২০১২ সালে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সে বছর তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমবাহের চাদর গলতে শুরু করেছিল।

উষ্ণতম আন্টার্কটিকা দেখা গিয়েছিল সেই ১৯৬১ সালে। তারপর ২০১৫-তে ফের উষ্ণতা বাড়ে। চলতি বছরের মার্চে তাপমাত্রার পারদ ছাড়ায় ১৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন,  যেভাবে জলবায়ু বদলাচ্ছে, উষ্ণায়ণ বাড়ছে, মেরুপ্রদেশের হিমবাহ (গ্লেসিয়ার) দ্রুতহারে গলছে, তাতে বিপর্যয়ের আর বেশি দেরি নেই। ‘ওয়ার্লড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (WMO)’-এর  বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ণ যে হারে বাড়ছে তাতে আর ৮০ বছরের মধ্যেই মেরুপ্রদেশের এক-তৃতীয়াংশ বরফ পুরোপুরি গলে যাবে।

২০১৫ সালে ডিসেম্বরে প্যারিসে  সংযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে ১৯০টি দেশ একটি সমঝোতা পত্রে স্বাক্ষর করে। এটাই বিখ্যাত প্যারিস চুক্তি। এই চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল, পৃথিবীর গড় উষ্ণতার বৃদ্ধি প্রাকশিল্পায়ন যুগের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখতে হবে। কিন্তু পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপুঞ্জের  ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) ২০১৮ সালে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে একটি বিশেষ গাইডলাইন তৈরি করে। যেখানে বলা হয়,প্যারিস চুক্তিতে ঠিক হওয়া ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর বিপর্যয় তাঁদের আগের হিসাব থেকে অনেক বেশি হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। তাই  তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড রাখার চেষ্টা  না করলে প্রলয় অনিবার্য।

গ্রিন হাউস গ্যাসগুলিই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। কার্বন ডাই অক্সাইড-সহ অন্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ ২০১৫-২০১৯-এর সময়কালে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির হার পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ। রিপোর্ট আরও বলছে, আন্টার্কটিকার বরফ স্তর কমে যাওয়ার হার বেড়েছে ছয় গুণ। ১৯৭৯-১৯৯০ সালে কমেছিল বছরে ৪০ গিগা টন আর ২০০৯—২০১৭ সালের মধ্যে কমেছে বছরে ২৫২ গিগা টন করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রার বাড়-বৃদ্ধি যদি হয় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি তা হলে আরও ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হবে। গলে যাবে হিমালয়ের অর্ধেক বরফ। তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৭ থেকে ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়লে গলে যাবে দুই-তৃতীয়াংশ বরফ।

You might also like