
শনিবার রাত বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল সৌদি আরবে। কয়েক দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সে দেশের মহিলারা পেয়েছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স। উৎসব তো হবেই। আর তাই রিয়াধের রাস্তায় শনিবার সারা রাত ধরে গাড়ি চালিয়েছেন মহিলারা। বলা ভালো, ডানা মেলে উড়ে বেরিয়েছেন তাঁরা।
সারা রাত উদযাপন চলেছে গোটা রিয়াধ জুড়ে। হাইওয়ের ধারে হাতে বেলুন নিয়ে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিলেন তরুণ-তরুণীর দল। বাকি সব মহিলার মতো এ দিন কিং ফায়াদ হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালিয়েছেন সৌদির সাংবাদিক সামার আলমগ্রেনও। বারোটা বাজতে না বাজতেই সাদা পোশাকে সেজে এ দিন স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখেছিলেন সামার। ঠোঁটের কোণের চিলতে হাসি, চোখের দীপ্তি আর আত্মবিশ্বাসই বলে দিচ্ছিল এই দিনটা তাঁর, এই দিনটা তাঁদের। সামার বলেছেন, “বিশ্বাস করুন আমি এখনও ভাবতেই পাচ্ছি না এই রাস্তায় স্টিয়ারিং হাতে গাড়ি চালাচ্ছি। সত্যিই আজ আমার পাখির মতো উড়তে ইচ্ছা করছে।” শনিবার সারা রাত শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত গাড়ি নিয়ে ছোটার পর সামার ঠিক করেছেন, এ বার নিজের মাকে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালাবেন। হয়তো যে স্বপ্ন কোনওদিনও সামারের মা দেখার সাহসই পাননি, এ বার সেটাই পূরণ হবে মেয়ের হাত ধরে।
প্রকাশ্যে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা থেকে শুরু করে গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়া—-একটার পর একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে কার্যত জোয়ার এসেছে সৌদিতে। যদিও পুরুষের অনুমতি ছাড়া মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়াটাই যে দেশে গর্হিত অপরাধ বলে করা হয়, বলাই বাহুল্য সে দেশে মহিলাদের গাড়ি চালানোটাও অনেকেই এখনও মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু তাতে কী? কুছ পরোয়া নেহি ভাব নিয়ে রীতিমতো উইকেন্ডের রাতে শহরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন রিয়াধের মহিলারা। অনেকে তো আবার সামারের গাড়ি থামিয়ে তুলেছেন সেলফিও। তবে সামার অবশ্য বলেছেন, দু-চারজন পুরুষ যে ব্যাঁকা চোখে তাকায়নি তা নয়। তবে এখন তো আর কিছু করার নেই। দেশের সরকার নিয়ম করেছে বলে কথা। তাই কারোর কারোর নাকের ডগা দিয়ে হুশ করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যেতে এ দিন বেজায় আনন্দ পেয়েছেন সৌদির মহিলারা।
এর আগে ‘৯০-এর দশকে একবার দেশের আইন অমান্য করে গাড়ি চালিয়েছিলেন এ দেশের ৪৭ জন মহিলা। পরে অবশ্য এ জন্য কঠিন মাসুলও দিতে হয়েছিল তাঁদের। যদিও এরপর প্রায় এক দশক কেটে গেলেও শেষ পর্যন্ত দাম পেয়েছে ওই ৪৭ জন মহিলার সাহসিকতা। সে দেশের সরকার বাধ্য হয়েছে অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে।
২০১৩ সালে শেখ সালেহ অল-লুহাইদান নামে এক মৌলবি জানান, মহিলারা ড্রাইভিং করলে নাকি জরায়ুর ক্ষতি হতে পারে। সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে মহিলাদের। এ হেন বেড়াজাল থেকে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন সৌদির মহিলারা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরেই সে দেশের সরকার আইন সংশোধন করে। বেশ কিছু মহিলাকে দেওয়া হয় ড্রাইভিং লাইসেন্সও। আর এই সফলতার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল এ দেশের তরুণ প্রজন্মের। তাঁদের ‘নো উমেন নো ড্রাইভ’ স্লোগানের জোরেই কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে চলে যায় সরকারের অন্ধতা।