
সকাল–বিকেল প্রচার করছেন। সমর্থক অনুগামীর সংখ্যা কম হলেও এলাকায় ভালো জনসংযোগ তাঁর। যেখানেই যাচ্ছেন, সবাইকে নাম ধরে ডাকছেন। বুধবার সন্ধেয় তাঁর এলাকার দশ নম্বর রামময় রোডের বস্তিতে প্রচারে বেরিয়েছিলেন। সেখানে আদা–চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন, ‘ক্রমশ তৃণমূল কংগ্রেসে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছিলাম। কোথাও ডাকা হত না। ২০১৬ সালে সদস্যপদ পুনঃনবীকরণ করা হয়নি। মমতা যখন উপনির্বাচনে দাঁড়ালেন তখন আমি ওঁর নামে কিছু হোর্ডিং লাগিয়েছিলাম। যেহেতু আমি খাতায়–কলমে তৃণমূলে ছিলাম না, তাই তৃণমূল সমর্থকবৃন্দের তরফে ওই হোর্ডিং লাগিয়েছিলাম। কিন্তু নেতৃত্বের তরফে ওই হোর্ডিং খুলে ফেলতে বলা হয়। আমায় কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানেও ডাকা হয় না। এজন্যই আমি নির্দল হিসেবে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
দলের বিরুদ্ধে আরও অভিমান উগড়ে দিয়ে বললেন, ‘আমি টিকিট চাইনি। দল সম্মান দিলে টিকিটের প্রয়োজন ছিল না। আমি যে নির্দল হয়ে দাঁড়াব সেটা সবাইকে জানিয়েছিলাম। টিকিট পাওয়ার পর যাঁরা আমাকে ভালোবাসেন তাঁরা আমাকে ফোন করেছিলেন। মদন মিত্র অনেকটা সময় এসে কাটিয়ে গিয়েছেন।’
এই ওয়ার্ডে রয়েছে ১১টি বস্তি। এছাড়াও বেলতলা, পদ্মপুকুর, ভবানীপুর এলাকা এই ওয়ার্ডেই। এলাকার বেশিরভাগ জায়গাতেই পুর–পরিষেবায় ঘাটতি রয়েছে বলে দাবি অনেকের। কোথায় আলো নেই। কোথায় আবর্জনার পাহাড় জমে রয়েছে। সচ্চিদানন্দ বললেন, ‘এখানে মেডিক্যাল ইউনিট ছিলনা। করেছি। গলিতে গলিতে লাইট ঢুকিয়ে দিয়েছি। তবে আরও দরকার। এখন বৃষ্টিতে ব্যাপক জল জমে। ড্রেনেজের কাজ হওয়া দরকার। ম্যালেরিয়ার পরীক্ষার কিট নেই।’
৬৭ সাল থেকে রাজনীতি করছেন, পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রচারে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ ভেসে উঠছে না? এই প্রশ্নের উত্তরে সচ্চিদানন্দ বললেন, ‘সবসময়ই ভেসে উঠছে। তবে আমার এই লড়াই মমতা বা অভিষেকের বিরুদ্ধে নয়। এই ওয়ার্ডের মানুষের জন্য। আমি এখনও তৃণমূলেরই সমর্থক।’
জেতার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী আপনি? বললেন, ‘আমি একশো শতাংশ আশাবাদী। তবে তৃণমূল সবসময় বলছে খেলা হবে। আমিও চাই খেলা হোক। তবে রেফারি যেন নিরপেক্ষ থাকে।’ সেইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, তাঁর সমর্থক–কর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সচ্চিদানন্দের অভিযোগ, রামচন্দ্র গায়ের নামে তাঁর এক অনুগামীকে সোমবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সমর্থক ছিলেন ওই ব্যক্তি। তবে সচ্চিদানন্দ এবার নির্দল প্রার্থী হওয়ায় তাঁর পক্ষে আসেন রামচন্দ্র। সেই কারণে রামচন্দ্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ভোটের আগে তাঁকে বিপদে ফেলতেই এসব করা হচ্ছে। ভোটের দিনও অশান্তির আশঙ্কা করছেন তিনি।
৭২ নম্বর ওয়ার্ডে এবার তৃণমূল প্রার্থী করা হয়েছে সন্দীপ বক্সিকে। ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল প্রার্থীর পাশেই দেখা যাচ্ছে জোড়াপাতা–র নির্দল প্রার্থীর হোর্ডিং, ব্যানার। লাগানো হয়েছে পতাকাও। গত পুরভোটেও তিনজন নির্দল জিতেছিলেন। পরে তাঁরা তৃণমূলেই যোগ দিয়েছিলেন। আপনি জিতলে কী সেই ‘নিরাপদ’ পথই বেছে নেবেন। উত্তরে সচ্চিদানন্দ বললেন, ‘তাঁর সম্ভবনা খুবই কম। দলে কোনও গুরুত্ব পাচ্ছিলাম না। এটা আমার ক্যামব্যাক ফাইট। এই ওয়ার্ডের সম্মানের জন্য লড়াই। আপাতত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাইছি।’