
মঙ্গলবার খড়গপুর আইআইটি-র ৬৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানেই যোগ দিতে এসেছিলেন রমেশ পোখরিয়াল। সেখানেই সারা দেশের প্রযুক্তি কোন জায়গায় এগোচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। তবে কে জানত, এই প্রযুক্তির কথা বলতে গিয়ে রামসেতুর প্রসঙ্গ টেনে আনবেন তিনি! ভারতের রামেশ্বরম থেকে শ্রীলঙ্কার সমুদ্র মধ্যবর্তী কিছু শিলাখণ্ড, যাকে রামের বানানো সেতু বলে কল্পনা করে থাকেন কেউ কেউ, সেই কল্পিত রামসেতুকেই প্রচীন ভারতের প্রযুক্তি ও কারিগরির নিদর্শন বলে উল্লেখ করলেন মন্ত্রী।
কথায় কথায় পোখরিয়াল বলেন, “অত দিন আগে, আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররাই তো রামসেতু বানিয়েছিলেন। এটা কি অস্বীকার করার কোনও জায়গা আছে? তখন তো আমেরিকা, ব্রিটেন বা জার্মানি থেকে কেউ এসে এটা বানিয়ে দিয়ে যায়নি!” গোটা হলঘরে তখন একটা পিন পড়লেও শোনা যাবে। সাধারণত মন্ত্রী ভাষণ দিলে, তার প্রতিটা বাক্যে সমর্থনের মৃদু বা জোরদার আওয়াজ ওঠাই দস্তুর। কিন্তু খড়্গপুর আইআইটি-র স্নাতকেরা সম্ভবত দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এমন তথ্য জানা বাকি আছে তাঁদের।
এমনিতেই কয়েক দিন আগে এই রামসেতু নিয়ে বড়সড় বিতর্কের ঝড় উঠেছিল দেশ জুড়ে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভাষণ দিতে গিয়ে আবারও সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। তার উপরে আবার তিনি দাবি করেছেন, সেই সেতু দেশের প্রযুক্তির নিদর্শন! সব মিলিয়ে কী প্রতিক্রিয়া জানাবেন, ঠিক করতে না পেরেই সম্ভবত নিস্তব্ধ ছিল প্রেক্ষাগৃহ। কিন্তু এই চুপ করে থাকা আবার মোটেও পছন্দ হয়নি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। তিনি চান, সকলেই তাঁর হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলান। তাই তিনি নিস্তব্ধতা ভেঙে বলে ওঠেন, “সত্যি কি না, ঠিক তো? বলুন না, আপনারা চুপ কেন?”
দেখুন, কী বলেছেন মন্ত্রী।
#WATCH Union HRD Minister Ramesh Pokhriyal at IIT Kharagpur, West Bengal: When we talk about Ram Setu, was it built by engineers from US, Britain & Germany? It was built by our engineers & it amazes the world even today. (27.08.2019) pic.twitter.com/Ils3jpMe9g
— ANI (@ANI) August 28, 2019
এর পরেই মৃদু হাততালিতে ভরে ওঠে প্রেক্ষাগৃহ। তখন পোখরিয়াল ফের বলেন, “আমাদের দেশের প্রাচীন কালের নানা রকম প্রথা নিয়ে আমরা গর্ব করি বলে, অনেকেই আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করে। কিন্তু আমরা গাছকে ভগবান মনে করি, গঙ্গা নদীকে মা হিসেবে মান্য করি। আমরা বিশ্বাস করি, হিমালয় নীলকণ্ঠের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। এঁরাই সব দূষণ শুষে নিচ্ছেন।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও দাবি করেন, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চিনকে পিছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হতে চলেছে ভারত। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের গীতাকে এখন বিজ্ঞান বলে মানছে গোটা বিশ্ব। বিভিন্ন দেশে তা নিয়ে চর্চা হচ্ছে। গীতা এক এমন বিজ্ঞান, যা আত্মার সঙ্গে পরমাত্মাকে মেলায়। আমাদের শরীর তো একটা কাঠামো মাত্র, কোনও একটা শক্তি আছে, যা তাকে চালিত করছে।”
এ সবের পাশাপাশি মন্ত্রী এ দিন সংস্কৃত ভাষাকে বিশ্বের প্রথম ভাষা বলে দাবি করেন। তাঁর কথায়, সংস্কৃতই সব চেয়ে সহজবোধ্য ও বিজ্ঞানভিত্তিক ভাষা, যা নাকি কম্পিউটারও বুঝতে পারে। বেদকেও পৃথিবীর প্রথম গ্রন্থ বলে দাবি করেন মন্ত্রী। বেদের আগে পৃথিবীতে অন্য কোনও বইয়ের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক।
স্বাভাবিক ভাবেই মন্ত্রীর এমন মন্তব্যে ফের বিতর্কের ঝড় উঠেছে। অভিযোগ উঠছে, যে রামসেতুর অস্তিত্ব নিয়েই নিশ্চয়তা নেই, সেখানে এক জন মন্ত্রী হয়ে তিনি কী করে এমন ‘প্রযুক্তি’র দাবি করতে। কিন্তু পোখরিয়াল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি বলতে চেয়েছিলেন, রামসেতু প্রযুক্তির উদাহরণ কি না, তা জানার জন্য পড়ুয়ারা যাতে আরও গবেষণা চালান। পোখরিয়ালের দাবি, তাঁর কথা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।