
পুজোর সময় হাসপাতালগুলি এমনিতেই যৎসামান্য লোকবল দিয়ে চলে। অনেক ডাক্তার, প্রশাসনিক লোকজন লম্বা ছুটিতে থাকেন। ফলে কম-বেশি সব হাসপাতালেই ভাইফোঁটা পর্যন্ত চিকিৎসা পুরোমাত্রায় হয় না। আরজি করে পুজোর আগে থেকে শুরু হয়েছে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের বিক্ষোভ আন্দোলন। রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অনেকেরই প্রশ্ন, তাহলে এ বছর কেন সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করা হল না?
রোগী আসছে হাসপাতালে, কিন্তু চিকিৎসক নেই। প্রতিবাদ, অনশন না উঠলে চিকিৎসা হবে না। হতাশ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরছেন রোগী সহ আত্মীয়রা। সপ্তাহ খানেক ধরে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে আর জি কর হাসপাতালে। স্বচ্ছ হাউসস্টাফশিপ কাউন্সিলিং, স্বচ্ছ হোস্টেল কাউন্সিলিং, স্বচ্ছ স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন সহ একাধিক দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত আর জি কর হাসপাতাল। এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে ভারতের ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন।
আরও পড়ুন: করোনা উপেক্ষা করেই কাশীতে অনুষ্ঠিত হল ঐতিহাসিক ‘ভরত মিলাপ’
গত ৩ অক্টোবর থেকে হবু ডাক্তারদের একাংশ অনশনে বসেন। ১৪ দিন ধরে লাগাতার প্রতিবাদ চলছে। তার মধ্যেই এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন হাসপাতালের ইন্টার্নরা। গত ৯ অক্টোবর থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন তাঁরা। আর তাতেই শিকেয় উঠেছে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা।
প্রতিদিনই বহু রোগী ভিড় করে হাসপাতালে। কিন্তু কর্মবিরতির জেরে বন্ধ হয়ে গেছে চিকিৎসা পরিষেবা। ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন আত্মীয় পরিজনরা। কোথায় নিয়ে যাবে? সেই ভাবনায় দিশেহারা তাঁরা।
প্রতিবাদরত ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই দিকে দাবি মানা না হলে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি পড়ুয়াদের। কর্মবিরতি চলছে। আর এই দুইয়ের চাপে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় রোগীদের।
দিনে দিনে কমছে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা। শুধু যে নতুন ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না তা নয়, চিকিৎসাধীন রোগীদেরও ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতাল থেকে। এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আর জি কর হাসপাতাল চত্বরে। ৪ অক্টোবর যেখানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫৪৮, সেটা ১৫ অক্টোবর এসে দাঁড়িয়েছে ১০৭৬ এ।
প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর রাত থেকে অনশনে বসেছে একদল হবু ডাক্তার। তাঁদের অভিযোগ, শাসকদলের মদতপুষ্ট অধ্যক্ষ ক্ষমতাবলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি স্তব্ধ করে রেখেছেন। দাবি একাধিক। এমনকি আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানোর অভিযোগও উঠেছে। আর তাতেই ক্ষেপে কর্মবিরতির ডাক ইন্টার্নদের। অবিলম্বে, অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে পোস্টার পড়েছে। মিছিল চলছে। স্বাস্থ্য ভবন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রতিবাদকারীদের মধ্যে চলছে চিঠি চাপাটি। সবের মাঝে বেহাল পরিষেবা। অসহায় রোগীরা।