
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক বছরে দু’দুটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনার ভার পেয়েছিলেন তিনি। একটির ফলাফলে দলকে মুখ লুকোতে হয়েছিল, আর একটিতে মুখরক্ষা হয়েছে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর (Priyanka Gandhi) সাফল্যের হার এখন পঞ্চাশ শতাংশ। হিমাচলপ্রদেশে (Himachal) বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের অবাক করা সাফল্যের কৃতিত্ব অনেকটাই তাঁর, মানছে কংগ্রেস, এমনকী কথায় কথায় গান্ধী পরিবারকে নিশানা করা বিজেপি (BJP) নেতারাও একান্তে বলছেন, সনিয়া কন্যার কৌশল বুঝতে ভুল হয়েছিল তাঁদের।
এ বছর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস হাইকমান্ডের তরফে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। ২০১৭-তে রাহুল গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর সংগঠনের কাজে শিক্ষানবিশি পর্বে উত্তরপ্রদেশেরে পূর্বাংশের দায়িত্ব দিয়েছিলেন বোন প্রিয়ঙ্কাকে। বাকি অংশের দায়িত্বে ছিলেন জিতিন প্রসাদ। তিনি বিজেপিতে যোগদানের পর উত্তরপ্রদেশের মতো বিশাল রাজ্যের ভার কাঁধে তুলে নেন প্রিয়ঙ্কা একাই।
এ বছরের গোড়ায় টানা দু’মাস লখনউয়ের ভাড়া বাড়িতে থেকে গোটা রাজ্যে প্রচার করেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই কংগ্রেস মহিলাদের দাবিদাওয়াকে ভোটের লড়াইয়ে প্রধান ইস্যু করেছিল গো-বলয়ের বৃহত্তম রাজ্যটিতে। অর্ধেক আসনে প্রার্থী করেন মহিলাদের। একই সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
তবু ইন্দিরার নাতনির সভাগুলিতে কূল ছাপানো ভিড়ের প্রতিফলন ইভিএমে দেখা যায়নি। কংগ্রেসের আসন সংখ্যা সাত থেকে কমে দুইয়ে নেমে আসে। ভোটও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
বছর শেষে সেই প্রিয়ঙ্কার মুখে হাসি ফোটালো হিমাচলপ্রদেশ। একই সঙ্গে দলের মুখরক্ষাও করেছে এই পাহাড়ি রাজ্য।
এখন চর্চা শুরু হয়েছে কীভাবে হিমাচলে দলকে জয়ের মুখ দেখাতে সক্ষম হলেন রাহুলের বোন। প্রিয়ঙ্কার ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন নেত্রী। উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল রাজ্যটির সামাজিক সংকীর্ণতার কারণে। মহিলা প্রার্থীদের অনভিজ্ঞতাও ব্যর্থতার একটি কারণ ছিল।
কিন্তু পাহাড়ি রাজ্য হিমাচল তা নয়। সেখানে মহিলারা সব ব্যাপারেই অগ্রভাগে। কংগ্রেস বাংলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আদলে সেখানে মহিলাদের মাসে দেড় হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা বলেছে। প্রিয়ঙ্কা প্রতিটি সভায় এই প্রসঙ্গে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। কিন্তু প্রার্থী নির্বাচনে মহিলাদের অত্যধিক প্রাধান্য দেননি। যদিও প্রচারে রাজ্যের নেতাদের মধ্যে অগ্রভাগে ছিলেন হিমাচলপ্রদেশের ছয়বারের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বীরভদ্র সিংহের স্ত্রী প্রতিভা। তিনিই বর্তমানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে।
প্রিয়ঙ্কা-সহ কংগ্রেস প্রচারে ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীকে তেমন আক্রমণ করেনি। উত্তরপ্রদেশে যা করে ভুগতে হয়েছে কংগ্রেসকে। ওই রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রচারে প্রিয়াঙ্কা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের তুলনায় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বেশি আক্রমণ করেন। কিন্তু সেই কৌশল ব্যর্থ হয়।
হিমাচলে প্রিয়ঙ্কার প্রচারে অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়েছে, পাহাড়ি ওই রাজ্য গঠনে তাঁর ঠাকুরমা ইন্দিরা গান্ধীর অবদান, পুরনো পেনশন ব্যবস্থা ফেরানো এবং সেনায় নিয়োগের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতা।
পাহাড়ি ওই রাজ্যটির শিক্ষিত ছেলেমেয়েরাও সেনায় যোগ দিয়ে থাকে। সরকারি চাকরি বলতে সেনা বাহিনীতে যোগদান অন্যতম গন্তব্য। সেই সেনায় মাত্র চার বছরের চুক্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হিমাচলের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর সভার দিনে পথ অবরোধ পর্যন্ত হয়েছে।
প্রিয়ঙ্কা পাহাড়ি জনতার ক্ষোভ উসকে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তবে মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ এড়িয়ে যাওয়া কংগ্রেসের সাফল্যের পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘরোয়া বিবাদে হিমাচল বিজেপি ব্যতিব্যস্ত ছিল। ৬৮ আসনের বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে শাসক দলের ২২জন বিক্ষুব্ধ প্রার্থী ছিলেন। কংগ্রেস ইতিবাচক কথা বলে মানুষকে বিজেপির মারামারি খেয়োখেয়ি নিয়ে অনেক বেশি সচেতন করতে সক্ষম হয়।
১৫ বছর ঠিক নয়, মুসলিম মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়ানোর আর্জি সুপ্রিম কোর্টে