Latest News

প্রেসিডেন্ট পদের জন্য শ্রীলঙ্কায় লড়াই দুই পরিবারের মধ্যে, কার জয়ে ভারতের লাভ

দ্য ওয়াল ব্যুরো: শ্রীলঙ্কায় রাষ্ট্রপতি পদের জন্য এখন মুখোমুখি লড়াই দুই পরিবারের।  সাজিত প্রেমদাসা ও গোতাবায়া রাজপক্ষের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবেন দ্বীপরাষ্ট্রের ১.৬ কোটি ভোটার। দুই যুযুধান প্রার্থীই শ্রীলঙ্কার দুই রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। প্রশ্ন হল, কে জয়ী হলে ভারতের লাভ।

ক্রিকেট যাঁরা দেখেন তাঁরা কলম্বোয় প্রেমদাসা স্টেডিয়ামের কথা জানেন। শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রণসিংহে প্রেমদাসার নামেই এই স্টেডিয়াম।  তাঁর ছেলে সাজিত প্রেমদাসা এবার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থী।  তাঁর বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন গোতাবায়া রাজপক্ষ, তাঁর দলের নাম শ্রীলঙ্কা পুড়ুজনা পেরামুনা পার্টি।  তামিল টাইগারের নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে যখন হত্যা করা হয়, তখন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহিন্দা রাজপক্ষ।  গোতাবায়া শুধু তাঁর ভাই নন, তামিল টাইগার দমনের সময় তিনি ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব। তাই সেই সময় উত্তর শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ উঠেছিল, তাতে অভিযুক্ত ছিলেন গোতাবায়াও।

শ্রীলঙ্কায় ভারত যখন শান্তিসেনা পাঠিয়েছিল, তখন এই দুই নেতাই নিজের মতো করে যোগাযোগ রেখেছিলেন কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আর হরিহরণের সঙ্গে।  ১৯৮৭-৯০ সাল পর্যন্ত হরিহরণই ছিলেন ভারতীয় শান্তি সেনার গোয়েন্দাপ্রধান।  তিনি মনে করেন, শ্রীলঙ্কার মানুষ যাঁকেই নির্বাচিত করুন না কেন, ভারতের দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

এক ইংরেজি সংবাদমাধ্যমকে হরিহরণ বলেন, “ইলম যুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে সুম্পর্ক রাখার সুবাদে এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে গোতাবায়ার।  তাঁর বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুর মানুষের রাজনৈতিক ভাবে বিরোধী মনোভাব রয়েছে, তবে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকায় শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাবে না নয়াদিল্লি।  রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনে যখন রাজপক্ষের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল, তখন সেই অভিযোগ লঘু করতে ভারত বড় ভূমিকা পালন করেছিল।”

রাজপক্ষের নির্বাচনী ইস্তাহারে জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে।  তাতে বলা হয়েছে, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ভারতের সঙ্গে আরও নিবিড় ভাবে কাজ করবেন।  মাহিন্দা রাজপক্ষের নির্বাচনী প্রচারে টাকা ঢেলেছিল চিন, তাই তাঁর সময়ে চিন ও শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি এসেছিল।  চিনের নির্বাচনে চিন টাকা খরচ করলেও তা নিয়ে ভারতের চিন্তার কোনও কারণ নেই।

প্রেমদাসাকে পছন্দ করেন তামিলরা। তাঁর মনোভাবও নমনীয়।  ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কার তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স সমর্থন জানিয়ে দিয়েছে প্রেমদাসাকে।  তাঁর প্রতি নরম মনোভাব পোষণ করেন তামিলনাড়ুর লোকজনও।

হরিহরণ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শ্রীলঙ্কা সফরের সময় শ্রীলঙ্কার আবাসনমন্ত্রী ছিলেন সাজিত প্রেমদাসা। ভারতের দেওয়া অর্থে সে দেশে যে আবাসন নির্মিত হয়েছে, তা যখন নরেন্দ্র মোদী সে দেশের মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন, তখন মোদীর সঙ্গে ছিলেন প্রেমদাসা। সেই সময় দুই পক্ষের ভাবভঙ্গি উষ্ণ মানসিকতারই পরিচয় দিয়েছিল।  তিনি চারবারের সাংসদ, তাই ভারতেক সঙ্গে সুদিন ও দুর্দিনের সাক্ষী তিনি।  তিনি দেশের উন্নয়নকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ায় আশা করা যায়, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কই বজায় রাখবেন।”

এই দুই যুযুধান প্রার্থীর মধ্যে এগিয়ে আছেন রাজপক্ষই।  ভোটেপ প্রচারে দেশের উন্নয়নের উপরে জোর দিয়েছেন প্রেমদাসা। অপর দিয়ে রাজপক্ষের প্রচারের কেন্দ্রে ছিল জাতীয় নিরাপত্তা। এই বছর এপ্রিল মাসে ইস্টারের সময় শ্রীলঙ্কায় যে জঙ্গি হামলা হয়েছিল, তার পরে সে দেশে মুসলমান-বিরোধী দাঙ্গা বেধেছিল। এই অবস্থায় দেশের উত্তরপশ্চিম অংশের শ্রীলঙ্কানদের সমর্থন রাজাপক্ষের দিকেই রয়েছে।  তবে তামিলদের দমন করার জন্য দেশের সংখ্যালঘু তামিলরা তাঁকে একেবারেই চান না।

হাম্বানটোটা বন্দর ৯৯ বছরের জন্য চিনকে লিজ দিতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা।  এই বন্দরে জন্য তারা যে ঋণ নিয়েছিল চিনের থেকে, তা পরিশোধ করতে না পারার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।  ভারত দেখিয়েছে কী ভাবে ঋণের ফাঁদ পেতে কূটনীতি করার কৌশল রপ্ত করেছে চিন।  উল্টোদিকে জাফনায় ১২০০ বাড়ি করে দেওয়াকে তামিলদের জন্য কাজ বলে ভারত উল্লেখ করেছে।  শ্রীলঙ্কার প্রয়োজনে ভারত সহায়তা করে, কিন্তু চিন তাকিয়ে থাকে প্রকল্প পাওয়ার দিকে – এ কথা বুঝতে পারছেন শ্রীলঙ্কার কূটনীতিকরা।

এক দশক ধরে শ্রীলঙ্কা ছিল রাজপক্ষের শাসনাধীন।  ২০১৪ সালে তিনি চলে যাওয়ার পরেও একই ভাবে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে চিন। তাদের লক্ষ্যই হল এই অঞ্চলে ভারতের অবস্থানগত সুবিধা খর্ব করা।  তবে শ্রীলঙ্কা ও চিন উভয়েই বোঝে যে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছাড়া এই এলাকায় প্রভার ধরে রাখা মুশকিল।

You might also like