
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সাত কাণ্ড রামায়ণের পর মঙ্গলবার বিকেলে প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishore) জানিয়ে দিলেন, কংগ্রেসের (Congress) প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর কংগ্রেস জানিয়েছে, সনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi) কংগ্রেসের ইলেকশন এমপাওয়ার্ড কমিটিতে প্রশান্তকে কিশোরকে উপযুক্ত জায়গা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশান্ত সবিনয়ে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মঙ্গলবার ঠিক একই সময়ে ঘড়ি ধরে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা আর প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishore) টুইট করে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এখন কৌতূহলের বিষয় হল, কেন রফাসূত্র বেরোল না? প্রশান্ত কিশোর পিছিয়ে এলেন কেন? ভয়ে? কেনই বা কংগ্রেস তাঁকে জায়গা ছাড়ল না!
আরও পড়ুন: ভিন রাজ্য থেকে ঢুকছে মাওবাদীরা, নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নবান্নের বৈঠকে
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishore) প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে কংগ্রেসের সভানেত্রী করা হোক। রাহুল গান্ধীকে নেতা করা হোক কংগ্রেস সংসদীয় দলের। আর সনিয়া গান্ধী ইউপিএ চেয়ারপারসন পদে থাকুন। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের অতি গভীরে প্রোথিত গঠনগত যে সমস্যা রয়েছে, তা দূর করতে সাংগঠনিক সংস্কার করা হোক। এদিন টুইটেও প্রশান্ত সে কথা লিখেছেন। তিনি বলেছেন, কংগ্রেসের আমার থেকেও বেশি দরকার সবল নেতৃত্বের। সেই সঙ্গে সংগঠনে ট্রান্সফরমেশনাল রিফর্ম তথা আমূল সংস্কার প্রয়োজন।
ঠিক এই কথাটা তুলে ধরেই কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা মঙ্গলবার রাতে বলেন, আলোচনা কেন ভেস্তে গেল তা এটুকুর মধ্যেই ধরা রয়েছে। প্রশান্ত কিশোর ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে জেতার তুলনায় জোর দিতে চাইছেন কংগ্রেসের সাংগঠনিক সংস্কারে। কে সভানেত্রী হবেন, কাকে সংসদীয় নেতা করা হবে ইত্যাদি প্রভৃতি বিষয়ে। কিন্তু আমাদের (পড়ুন কংগ্রেসের অধিকাংশ বর্ষীয়ান নেতার) মতে, ভাই তোমার কাজ হল ভোটে জেতানোর জন্য কৌশল নির্ধারণ করা। তুমি তাই করো। সে জন্য তোমাকে ইলেকশন এমপাওয়ার্ড কমিটিতে উপযুক্ত দায়িত্ব ও মর্যাদা দেওয়া হবে।
কংগ্রেসের একাধিক নেতার মতে, প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishore) ঠিক এই জায়গাতেই পিছিয়ে গিয়েছেন। কারণ প্রশান্ত বুঝতে পারছেন, কংগ্রেস এখন যে পরিস্থিতিতে রয়েছে তাকে নিয়ে ২০২৪ সালে লোকসভা জেতানো বা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে নির্বাচিত করা কঠিন কাজ। তাতে ব্যর্থ হলে তাঁর ব্র্যান্ডে আঘাত লাগবে। বিশেষ করে কংগ্রেসের গরিষ্ঠসংখ্যক লোকজন বলতে শুরু করবেন প্রশান্তের জন্যই হল না। হতে পারে সে কারণেই পিছিয়ে এলেন প্রশান্ত।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ও দলের নবগঠিত ইলেকশন এমপাওয়ার্ড কমিটির এক সদস্যের কথায়, বাইরে থেকে কেউ এসে বলে দেবে যে কংগ্রেসে কে কোন পদে থাকবে? এটা কখনও হয়? কেন কংগ্রেস কোনও নবাগতকে সেই স্থান ছেড়ে দেবে? প্রশান্ত কিশোর যদি ঠিক করে দেয় যে কংগ্রেসের সভাপতি বা সভানেত্রী কে হবে, তা হলে তো তাঁর মর্যাদা সভানেত্রীর উপরে চলে গেল। তখন এই বার্তা যাবে প্রিয়ঙ্কা সভানেত্রী কিন্তু বকলমে প্রশান্ত কিশোর চালাচ্ছে। এমনটা দেড়শ বছরের পুরনো দল কেন করতে দেবে? তাই প্রশান্তের যে যোগ্যতা ও এক্সপারটিজ রয়েছে, তাঁকে তেমনই কাজ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আসলে প্রশান্ত কিশোরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও কংগ্রেসে প্রশ্ন রয়েছে। সোমবার তেলেঙ্গনা রাষ্ট্রীয় সমিতির সঙ্গে চুক্তি করেছে প্রশান্ত কিশোরের আই-প্যাক। তার পর টুইট করে প্রশান্তের সমালোচনা করেছেন রাহুল ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা মানিক টেগোর। মানিক প্রশ্ন করেছেন, যে লোকটি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লোককে বুদ্ধি দেবে, তাঁকে কংগ্রেসের লোক ভরসা করবে কীভাবে?
সবমিলিয়ে এই রামায়ণের প্রতিটি কাণ্ডেই ছিল অবিশ্বাস আর আশঙ্কার পরত। এ যাত্রায় আলোচনা ভেস্তে যাওয়া তাই হয়তো অনিবার্যই ছিল।