
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলায় আলুর আকাল (Potato Market) সামলাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ। না হলে এতদিনে আলু ৫০ টাকা কিলো হয়ে যেত। এমনটাই মত কলকাতার ব্যবসায়ীদের।
রাজ্যে আলুর চাহিদার (Potato Market) তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও বাজারে জোগান কম। যে কারণে ইতিমধ্যেই আলুর দাম অনেকটাই বেড়েছে।

দু’দিন আগেও জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫–৩০ টাকা কেজি দরে। চন্দ্রমুখী ৪০–৪৫ টাকায়। কিন্তু পরিস্থিতি আর খারাপ হওয়ার আর সম্ভবনা নেই বলেই মনে করছেন আলু চাষি ও আড়তদাররা। তাঁদের বক্তব্য, ‘পরিস্থিতি স্থিতিশীল।’ এবার বাংলার হিমঘরের আলু (Potato Market) আসতে শুরু করলে দাম দ্রুত কমে যাবে।
আরও পড়ুন: সম্পত্তির লোভে বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে গ্রেফতার ছেলে-ছেলের বউ
আলুর দাম এভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন ক্রেতারা। কেন আলুর দাম বাড়ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে শুক্রবার জানা গেল, চলতি মরসুমে দক্ষিণবঙ্গে আলুর ফলন বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কম হয়েছে (Potato Market)। কলকাতার আলুর চাহিদার বেশিরভাগটাই মেটায় হুগলি, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর। কিন্তু ওইসব জেলায় অতিবৃষ্টিতে আলুর ক্ষতি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা। কোলে মার্কেটের আলুপট্টির ব্যবসায়ীরা জানালেন, এবারে ১৮–২০ টাকা কেজি দরে আলু মজুত হয়েছে। ফলে হিমঘর থেকে যখন আলু বাজারে যাচ্ছে, তখন আরও কিছু খরচ যুক্ত হচ্ছে। ফলে পাইকারি বাজার ঘুরে যখন আলু খুচরো বাজারে আসছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আলুর দাম বাড়ছে।

সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের ব্যবসায়ীদের একাংশ। তারা বর্ধমানের হিমঘরগুলিতে ব্যাপক পরিমাণ আলু ঢোকাচ্ছে। কানপুর, আগ্রা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক ভর্তি হয়ে আলু এরাজ্যে আসছে। রাজ্যে আলুর ফলনের ঘাটতি কমাতে উত্তরপ্রদেশ থেকে ব্যাপক আলু আনার ব্যবস্থা করেছে কলকাতার ব্যবসায়ীরাও। উত্তরপ্রদেশে অনেক কম দামে হিমঘরে আলু মজুত হয়েছে। ফলে তুলনামূলকভাবে অনেক কম দামে সেখানকার আলু এখানে চলে আসতে পারছে। যেকারণে দাম একটু বেশি থাকলেও আলুর যোগান অব্যহত। দামও ক’য়েকদিনের মধ্যে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসতে চলেছে বলে দাবি তাঁদের।

ফারাক্কাবাদ, ছিবড়া মোড়, আগ্রা থেকে আসা জ্যোতি, পোখরাজ আলুই এখন শহরের হেঁশেলে। পাইকারি বাজারে এই আলুর ৫০ কেজি একটি বস্তার দাম যেখানে থাকে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এখন সেই আলুই এবার প্রায় দ্বিগুণ ছুঁয়েছে।
হরিপালের বেচারাম মালি বললেন, ‘আমার পুরো জমিতেই আলু চাষ করি। বিঘে প্রতি ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্ত এবার লোকসান হয়ে গেছে। এক কুইন্টাল আলুর দাম দাঁড়িয়েছে ১৪শো টাকা। গতবছর যা ছিল আটশো–নশো টাকা। বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার পর আলু বসিয়েছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় চাষে আলু বাড়েনি। তাই হিমঘরেও আর রাখিনি। এরকম অবস্থা প্রায় সব জায়গাতেই।’
ওই এলাকারই কৃষক প্রবীর ধারা বললেন, ‘পরের চাষে আলুর ফলন ভালো হয়নি। তবে বাইরের আলু এসেছে বলেছে বলে এখনও আলু মিলছে। না হলে আলু ৫০–৬০ টাকা কিলো হত। চন্দ্রমুখী আলু বাড়তি চাহিদা দেখে বর্ধমানের কিছু মোকাম আটকে রেখেছে। যেকারণে বেশি দাম দিয়ে কিনছেন ক্রেতারা।’

ব্যবসায়ীরা জানালেন, রাজ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই উত্তরপ্রদেশের আলুর আমদানি হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের পোখরাজ আলুর দাম ৫০টাকা কেজি বস্তায় রোজ বাড়ছে ১০ টাকা করে। ১ মে ৫০ কেজি আলুর দাম ছিল ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা। গত তিন দিনে তা ৬০ থেকে ৭০ টাকা বেড়ে গিয়েছে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায়।
কোলে মার্কেটের আলুর আড়ৎদার দিলীপ দত্ত বললেন, ‘ডিসেম্বর–জানুয়ারি মাসে কাঁচা আলু সাপ্লাই হত। সেই আলু পুরো মার খেয়েছে। কিছু আলু বেঁচে গেছে চাঁপাডাঙ্গা মোকামে। তবে আলুর বাজার বাঁচিয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও মালদা। না হলে কোন জায়গায় দাম চলে যেত, চিন্তার বাইরে। আমাদের প্রোডাকশন ভালো থাকলে ভিনরাজ্যের আলু আনার দরকার পড়ত না।’
শুক্রবার কলকাতায় জ্যোতি আলুর পাইকারি দাম ছিল সাড়ে এগারোশো টাকা কুইন্টাল। এক নম্বর জ্যোতি বারোশো টাকা। খুচরো কেউ ২৫–৩০ টাকায় বিক্রি করেছে। পোখরাজ আলুর দাম তুলনামূলক কম। বস্তা একহাজার পঞ্চাশ টাকা। ওই আলুর খুচরো দাম ২২–২৫ টাকা।
দিলীপ বাবু আরও বলেন, ‘এই প্রথম উত্তরপ্রদেশ থেকে কাঁচা আলু ঢুকল। এখানে মার্কেটে টান, এই সুযোগটা নিল উত্তরপ্রদেশ। আমাদের ঘাটতিও মিটল। ওরা লাভ করল। তবে আলুর দাম কবে একদম স্বাভাবিক হবে বলা যাচ্ছে না। এখন মাল আনার খরচ অনেক বেড়েছে। আগে আলুর গাড়ির খরচ ছিল ৬শো টাকা। এখন হাজার টাকা চাইছে। স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়াতে হচ্ছে।’
‘এবছর দ্বিতীয়বার আলু লাগানোর পর তা হয়নি। হুগলির আলু জন্মালই না। মালদা, ধুপগুড়িতে কিছু আলু হয়েছে। কিন্তু তাতে বাজারের চাহিদা মিটছে না। সুযোগ বুঝে থাবা বসিছে উত্তরপ্রদেশ। তবে ওরাই মার্কেট স্থিতিশিল রেখেছে। না হলে আলু ৪০টাকা কেজি হত।’ বললেন, ধর্মরাজ দাস।
ক্রেতারা জানাচ্ছেন, বাংলার আলুর স্বাদের ধারেপাশে উত্তরপ্রদেশ আসতে পারবে না। সেরাজ্যের পোখরাজ জাতীয় আলুর চাষই বেশি। সহজে সিদ্ধ হতে চায় না। কিন্তু আলু ছাড়া কোনও তরকারিই হয় না। অগত্যা আগামী মরসুম পর্যন্ত ওই আলুই বেশি দামে গিলতে হবে।