
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narensdra Modi) বললেন, দেশের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ হল স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি (Corruption) এবং পরিবারতন্ত্র (Nepotism)। এর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।
স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি এবং ৭৬তম জন্মদিবসে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নরেন্দ্র মোদী স্বজনপ্রীতিকে গুরুতর অপরাধ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন দেশকে এর বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়া দরকার।
স্বজনপ্রীতি বলতে প্রধানমন্ত্রী আসলে স্বজনপোষণের কথাই বলতে চেয়েছেন। আত্মীয়-পরিজন-পরিচিতদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চলতি ব্যধির অবসান চেয়ে দেশবাসীকে সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে বলেছেন তিনি।
টেলি-প্রম্পটার নয়, স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে কাগজেই ভরসা রাখলেন মোদী
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘আমাদের তাদের সুযোগ দিতে হবে যারা প্রতিভাবান এবং দেশের উন্নতির জন্য কাজ করবে। প্রতিভাই হবে নতুন ভারতের ভিত্তি।’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী কয়েক মাস যাবৎ রাজনৈতিক দলের পরিবারতন্ত্রর বিরুদ্ধে সরব। গান্ধী পরিবারকে নিশানা করে বিজেপির পরিবারতন্ত্র বিরোধী লড়াইয়ের পুরনো। নরেন্দ্র মোদী ইদানীং আঞ্চলিক দলগুলিকেও এই ব্যাপারে নিশানা করেছেন। বাংলা-সহ একাধিক রাজ্যের শাসক দলকে ইদানীং এই ইস্যুতে আক্রমণ শানাচ্ছেন তিনি। মোদীর কথায়, পরিবারবাদীরা দুর্নীতিতেও সিদ্ধহস্ত। তাঁর বক্তব্য, পরিবারবাদ হল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় বিপদ।
আজ স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য রাজনীতি টানেননি। তবে নিজের রাজনীতির প্রসঙ্গই তুলেছেন। অনেকেই মনে করছেন, স্বাধীনতার ৭৬ তম জন্মদিনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আগামী দিনে তাঁর রাজনীতির প্রধান এজেন্ডার কথাই তুলে ধরলেন কৌশলে।
তিনি বলেন, যখন আমি স্বজনপ্রীতি এবং বংশবাদের কথা বলি, অন্যরা মনে করে আমি শুধু রাজনীতির কথা বলছি। না, দুর্ভাগ্যবশত রাজনীতির এই কুফলই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে স্বজনপ্রীতিকে লালন করেছে।’
পরিবারবাদকে রাজনীতির সংস্কৃতি হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাবনা, সংস্কৃতিই বাকি সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির কারণ। তাঁর কথায়, ভারতের প্রতিটি ইনস্টিটিউটকে স্বচ্ছ করার জন্য, যোগ্য লোকদের সুযোগ দেওয়া উচিত। আর যারা দুর্নীতির সুযোগ নিচ্ছে তাদের শাস্তি দিতে সমাজ হিসেবে আমাদের একত্রিত হওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন জাতিকে দুর্নীতির বিরোধিতা করতে হবে। দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া চলবে না। প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ, জাতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে, কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্থদের বিরোধিতা করে না।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রধানমন্ত্রী যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব তখন দেশের তামাম বিরোধী শিবিরের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তের নামে হেনস্থা করা হচ্ছে। দুর্নীতি দমনের চাইতে মোদীর উদ্দেশ্য ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের জব্দ করা।
প্রধানমন্ত্রীও ভাষণে আজ ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, যতদিন না দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেওয়ার মানসিকতা জনগণের মধ্যে তৈরি হবে, ততদিন জাতি দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে পারবে না। আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ভাষণে তুলে ধরেন, গত সাড়ে আট বছরে তাঁর সরকারের কালো টাকা উদ্ধারে লড়াইয়ের কথা। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর এই দাবি অসত্য। তিনি বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে দেশবাসীকে বিলিয়ে দেবেন। বাস্তবে দেশের টাকা বিদেশে চলে গিয়েছে। তিনি দাবি করেছিলেন, বিমুদ্রাকরণের ফলে কালো টাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বাস্তবে কালো টাকার পাহাড় জমেছে দেশে।