
হিন্দিতে একটি প্রবাদ আছে, যা এখন কোচির বাসিন্দাদের দারুণ প্রিয়। “না রহেগা বাঁস, না বাজেগি বাঁসুরি…”, তাঁরা বলছেন, “না রাহেগা পেড়, না রাহেঙ্গে পাক্সী…”। যে দ্রুততার সাথে আমরা দৌড়চ্ছি সকলেই, তাতে তো ক’দিন পরে এমনিও গাছ আর থাকবে না পৃথিবীতে, কংক্রিটের জঙ্গলে শুধু লম্বা লম্বা বিল্ডিং দাঁড়িয়ে থাকবে শূণ্যে চেয়ে। আর অরণ্য ধ্বংস হবে একের পর এক। বাস্তুতন্ত্রের মৃত্যু ঘটবে সময়ের সাথে সাথেই। এমনিও আজকাল বর্ষাকাল চলে আসে, তবু বৃষ্টি আসে না। একের পর এক হিমবাহ গলে যায় বিশ্ব উষ্ণায়নে। তবু আমাদের কোনও মাথা ব্যথা নেই। কোচির মানুষ বলছেন, রোজ পাখির বাহ্যে তাঁদের গাড়ি, স্কুটার, বাইক এতটাই নোংরা হয়ে থাকে যে সেগুলো পরিষ্কার করতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট বেশি সময় লাগে তাঁদের। তাঁরা নাকি ‘লেট’ হয়ে যান সবক্ষেত্রে।
কোচির আলুভা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পার্কিংলটে যে কটা গাছ আছে, সেগুলো কেটে ফেলার অনুরোধ করে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখেছেন কোচির বাসিন্দারা। সেখানে তাঁদের গাড়ি রাখার জায়গা কম পড়েছে, বা তাঁরা সেখানে বাড়ি তুলতে চান তা কিন্তু একেবারেই নয়। ওই গাড়ি নোংরা হয়ে যায়, তাই গাছ সব কেটে ফেলতে চান তাঁরা!
সাধারণ মানুষের এই আবেদনের পরে এবার আর কোনও উপায় না পেয়ে হয় তো সত্যিই গাছগুলো কেটে ফেলবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাঁদেরই একজন বলছেন, “এতে ইকোসিস্টেমে প্রভাব পড়বে, কিন্তু আর তো কোনও উপায়ও দেখছি না। ” তিনি আরও বলছেন, ৩০০০ বর্গফুটের মাত্র অর্ধেক জায়গা অর্থাৎ ১৫০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে গাছ রয়েছে এখানে। আর পার্কিং লট তৈরি হওয়ার আগে থেকে যদি সেখানে গাছ থেকে থাকে তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়, আর পরে যদি এই গাছগুলো লাগানো হয়, তাহলেও তো সমস্যার কথা নয়। কারণ সারা বিশ্ব জুড়েই এখন গাছ লাগানোর কথা বলা হচ্ছে। তিনি বিস্ময়ের সাথে জানতে চাইছেন, আর অন্য কোনও উপায় কি নেই? যাঁদের গাড়ি নিয়ে সমস্যা তাঁরা তো চাইলে সেই চার চাকা বা দু চাকা গুলোকে কভার পরিয়ে রাখতেই পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ব্যক্তির এই বোধোদয় হলেও কোচির বাকি মানুষদের তা হয়নি। তাই শেষ অবধি কোচির গাছগুলোয় বাসা বাঁধা পাখিগুলো হয় তো বা আশা আশঙ্কার দোলাচলেই রয়েছে। আগামী প্রজন্মকে বাসযোগ্য পৃথিবী দেওয়ার অঙ্গীকার যাঁরা করবেন, তাঁরা গাছ লাগানোর বদলে কেটে ফেলতে চাইছেন।
সত্যি সেলুকাস……..