Latest News

১০ জনের মধ্যে চার জন নাকি চিনা ফোন কিনবেন না, বলছে গালওয়ান-কাণ্ডের আগের সমীক্ষা

১৫ই জুন চিনা সংস্থা ওয়ান প্লাস তাদের দু'টি নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের সেল দেয়। সেল শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুই স্মার্টফোনেরই স্টক সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হয়ে যায়। ১৮ জুন ছিল পরবর্তী সেল। একই ভাবে বিক্রি সমস্ত ফোন।

দ্য ওয়াল ব্যুরো: লাদাখে ভারত-চিন সংঘর্ষের জেরে চিনা পণ্য বয়কট করার ডাক উঠেছে গোটা দেশে। অনেকেই ডাক দিয়েছেন চিনা অ্যাপ ডিলিট করার। অনেকে আবার বলেছেন চিনা ফোন ব্যবহার না করার কথা। এই সময়ে একটি রিসার্চ ফার্মের সমীক্ষা বলছে, ১০ জন ভারতীয়ের মধ্যে মাত্র চার জন চিনা স্মার্টফোন না কিনতে রাজি হয়েছেন। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ মানুষ চিনা ফোন কেনারই পক্ষে।

মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ের মাঝে এই সমীক্ষা চলে। অর্থাৎ গালওয়ান কাণ্ডের আগে পর্যন্ত জানা হয় মানুষ কী চাইছেন। ১৯ জুন এই সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেখানে জানা গেছে, এ বিষয়ে কথা বলা মাত্র জোর দিয়ে চিনা ফোন না কেনার কথা জানান প্রতি দশ জনের মধ্যে মাত্র চার জন। অনেকেই নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেননি যে তাঁরা চিনা ফোন আর কখনও কিনবেন না।

গত সোমবার লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সীমান্তে চিনা সৈন্যরা পিটিয়ে মেরেছে ২০ জন ভারতীয়কে। চিনের সঙ্গে সমস্যা অবশ্য চলছিল আরও অনেক আগে থেকেই। সারা দেশেই ডাক ওঠে চিনা পণ্য বয়কট করার। কিন্তু সেনামৃত্যুর ঘটনায় এই ডাক আরও জোরালো হয়। তবে এই সমীক্ষা তার আগেই শেষ হয়েছে। আধিকারিকরা বলছেন, “আমরা ভেবেছিলাম সীমান্তের টানাপড়েন, একটানা সংঘাত চিনের প্রতি ভারতের রাগ ও ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে, এর প্রভাব পড়বে চিনা ফোনের গ্রাহকদের মনেও। কিন্তু সেই বিরোধিতা বাস্তবে দেখা গেল না।”

তবে সাধারণ মানুষের স্মার্টফোন কেনার বিষয়টি আরও অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বলেই জানিয়েছে রিপোর্ট। সকলেরই নিজস্ব বাজেট থাকে। পকেট বোঝার ব্যাপার থাকে। কম টাকায় সেরা জিনিসটি সকলে চান। সেই দিক থেকে এগিয়ে চিনা ফোনগুলি। তারা কাজেও এগিয়ে, দামের দিক থেকে খানিক সুবিধাজনক। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উপরে এই সবটাই দাঁড়িয়ে আছে।

ফলে চিনা সংস্থা নির্মিত ফোনগুলির প্রতি চিনবিরোধী মনোভাবের ছাপ খানিকটা পড়লেও, বাজার বদলে ফেলা এত সহজ হবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়কট চায়না হ্যাশট্যাগ যত দ্রুত ভাইরাল হয়েছে, মানুষের প্রয়োজনমতো বিকল্প খুঁজে পাওয়া এবং চিনা মোবাইল সম্পূর্ণ বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেও তত দ্রুত হবে না।

তবে ফোন নির্মাতা সংস্থারাও পিছিয়ে নেই। তারাও ভারতবিরোধী মানসিকতার বিপক্ষে নিজেদের প্রোডাক্ট বেচার জন্য নানা নতুন প্রচার শুরু করেছে। চিনা সংস্থা শায়মির শাখা-সংস্থা পোকো যেমন এ মাসের ৩ তারিখ থেকে শুরু করেছে ‘পোকো ফর ইন্ডিয়া’ অনলাইন প্রচার। আবার ১৬ তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও ফোন নির্মাতা সংস্থা রিয়্যালমি-র সিইও বলছেন, তাঁদের সমস্ত প্রোডাক্ট ভারতেই তৈরি হয়েছে এবং ফোনের ৬০ শতাংশেরও বেশি উপাদান এ দেশেরই।

সে যাই হোক না কেন, ভারতে চিনা ফোনের বাজারে এত সহজে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না বলেই স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমে। গত ১৫ই জুন চিনা সংস্থা ওয়ান প্লাস তাদের দু’টি নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের সেল দেয়। সেল শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুই স্মার্টফোনেরই স্টক সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হয়ে যায়। ১৮ জুন ছিল পরবর্তী সেল। একই ভাবে বিক্রি সমস্ত ফোন। এই দুটো স্মার্টফোনেরই দাম প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি এবং তারও একটু বেশি। তার পরেও ফোন কেনার এই হিড়িক আরও একবার বুঝিয়ে দিল, চিনা পণ্য বয়কট সহজ নয়!

টেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেও ভারতীয় স্মার্টফোন সংস্থাগুলিও চিনের কাঁচামালই ব্যবহার করে। এ ছাড়াও কিছু কিছু ভারতীয় স্মার্টফোন সংস্থা আবার চিনের কাঁচামাল কিনে ভারতের স্টিকার লাগায় তাতে। তবে সে যাই হোক, কোয়ালিটির দিক থেকে আজ অবধি কোনও ভারতীয় স্মার্টফোন সংস্থাই দাম ও ক্রাইটেরিয়ার তুল্যমূল্য বিচারে টেক্কা দিতে পারেনি শায়মি, অপ্পো, ওয়ালপ্লাসের মতো চিনা ব্র্যান্ডগুলিকে। তাই হয়তো কিছুটা বাধ্য হয়েই মানুষজনের এখনও অবধি চিনা স্মার্টফোনের উপরেই ঝোঁক বেশি। অন্তত তেমনই বলছে সমীক্ষা।

You might also like