
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বৃদ্ধা, অথর্ব, অসুস্থ সন্ন্যাসিনীদের শেষ জীবনের আশ্রয়স্থল আমেরিকার ‘আওয়ার লেডি অফ অ্যাঞ্জেলস কনভেন্ট’। এই সন্ন্যাসিনীদের বেশিরভাগই তাঁদের গোটা জীবন ধরে শুধু মানুষের সেবা করেছেন। মানুষের জন্য কাজ করে গিয়েছেন শত বাধা তুচ্ছ করে। আজ করোনা থাবা বসিয়েছে সেই কনভেন্টেই। ইতিমধ্যেই মারা গেছেন ছ’জন সন্ন্যাসিনী।
‘আওয়ার লেডি অফ অ্যাঞ্জেলস কনভেন্ট’ একটি শান্তির জায়গা। অদ্ভুত মায়াঘেরা প্রকৃতি। পাখিদের কলতানে মুখরিত থাকে সকাল। সঙ্গে প্রার্থনা, মনোরম পরিবেশ। কিন্তু সেসব এখন ম্লান। কারন বিপদের মুখে গোটা কনভেন্ট। এমনিতেই এখানকার বাসিন্দা বৃদ্ধারা সকলেই অসুস্থ। অনেকে আবার স্মৃতিভ্রংশের সমস্যায় ভোগেন। তার উপরে করোনার এই সংক্রমণে সকলেই বিপদে।
কনভেন্টের কেয়ারটেকার বলছিলেন, আবাসিকরা সকলেই শুধু বৃদ্ধা নন, অসুস্থও। কারও কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এঁরা সকলেই প্রায় আর্তের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেছেন। অনেকে করেছেন প্রান্তিক জায়গায় শিক্ষকতা। তরুণ বয়সেই সংসার ত্যাগ করে মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেন এঁরা। তার পরে সারাজীবন ধরে সেই দায়িত্ব পালন করে এই শেষ বয়সে আসেন শান্তির খোঁজে। শান্তির এই নীড়ে এখন সদা আতঙ্ক।
মাস দুয়েক আগে কনভেন্টে এই মারণ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৎপর হয়ে ওঠেন সকলে। স্বাস্থ্যকর্মীরা দ্রুত সকলের টেস্টিং শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে অনেকেরই টেস্ট করা সম্ভব হয়নি।
এর পরে এপ্রিলের গোড়াতেই কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয় ৯৬ বছরের আবাসিক সিস্টার মেরি রেজিন কলিন্সের। সামনেই ছিল জন্মদিন। কিন্তু তা আর পালন করা হয়নি। তিন দিনের মধ্যে মারা যান তিনি। কনভেন্টের কর্মীরা মিসেস কলিন্সের পরীক্ষাও করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি স্মৃতিভ্রংশের সমস্যায় ভুগতেন, তাঁকে রাজিই করানো যায়নি টেস্টিংয়ে। কনভেন্টে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী জানান, মৃত্যুর পরে জানা যায় তিনি কোভিড ১৯-এর শিকার ছিলেন। এর পরেই পরেই মারা যান আরও একজন সন্ন্যাসিনী সিস্টার ম্যারি জুন স্কেন্ডার। তাঁর বয়স ছিল ৮৩।
আমেরিকার এই পেনসিলভ্যানিয়া অঞ্চলে প্রায় হাজার সাতেক করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। মারা গেছেন প্রায় ৪০০ জন। বেশিরভাগ মৃত্যু ঘটেছে মিলওয়াউকি এলাকায়, যেখানে এই কনভেন্টটি অবস্থিত।
কনভেন্টের একটি পৃষ্ঠপোষক সংস্থা ‘স্কুল সিস্টারস অফ সেন্ট ফ্রান্সিস’-এর পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, কনভেন্টের প্রতিটি কর্মী প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা মেনে চলছে। কনভেন্টের বয়স্ক সদস্যদের নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট সচেতন। কনভেন্টের সমস্ত রকম অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে, সকলেই সামাজিক দূরত্ব পালন করছেন। সকলেই মাস্ক পরছেন। তাপমাত্রা পরীক্ষা চলছে সকলের। কিন্তু একই সঙ্গে ওই সংস্থার কর্ণধার জানান, স্মৃতিভ্রংশ হওয়া মানুষের চিকিৎসা করা খুব কঠিন। তাঁরা মনেই রাখতে পারেন না কখন কী ঘটেছে তাঁদের সঙ্গে।
কিছুদিন পরে ওই কনভেন্টে সিস্টার ম্যারি ফ্রান্সলে শেরবুর মারা যান একই ভাবে। বয়স ছিল ৯৯। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা। এর পরে মারা যান ১০২ বছরের সিস্টার অ্যানেল্ডা হল্টক্যাম্প। জানা যায়, তিনি আগের তিন জনের সংস্পর্শে এসেছিলেন। আবার ৮৮ বছরের সিস্টার বারনাডেট কেল্টারের শুরুতে পরীক্ষায় করোনা মুক্ত ধরা পড়েন। শেষে তাঁরও কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয় ও মারা যান।
এ পর্যন্ত সর্বশেষ ও ৬ নম্বর মৃত্যুটির খবর এসেছে আজ, রবিবার। জানা গেছে, ৯৪ বছর বয়সি সিস্টার জোসফিস সিইর-এর। ২০১২ সাল থেকে এই কনভেন্টে আছেন তিনি। তার আগে অন্য একটি মিশনে সেবার কাজ করে এসেছেন গোটা জীবন। মৃত্যুর পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে, করোনা বাসা বেঁধেছিল তাঁর শরীরেও।
কনভেন্টের এক আধিকারিক জেন মরগ্যান জানিয়েছেন, এভাবে ছ’জনের মৃত্যুতে তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কে। এত বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের মাঝে কী করে করোনা আটকাবেন, তা ভেব দিশাহারা তাঁরা। এই ছ’জন সন্ন্যাসিনীর মৃত্যু তাঁদের কাছে অপূরণীয় ক্ষতি বলেও জানান তিনি।