
কিন্তু এ তো গেল সধবাদের কথা। কিন্তু যাঁদের স্বামী নেই? মারা গিয়েছেন, কিংবা মহিলা স্বামী পরিতক্ত্যা। তাঁদের কী হবে। একুশ শতকের সো কলড সভ্য সমাজ কিন্তু আজও এঁদের সিঁদুরখেলার অনুমতি দেয় না। বরং দশমীর দিন পুজো মন্ডপ চত্বরে এঁদের হদিস মিললেই নাক—-মুখ কুঁচকে যায় বাকিদের। ভাবটা এমন যে একে তো বিধবা তায় আবার এতো শখ। আর ডিভোর্সিদের কথা তো বাদই দিন। যে সমাজের অধিকাংশ আজও সব বিষয়ে মহিলাদেরই দোষ দেখেন তাঁরা যে ডিভোর্সিদের সিঁদুরখেলাটা কিছুতেই মেনে নেবেন না এ কথা নতুন নয়।
তবে তালিকা এখানেই শেষ নয়। রয়েছেন আরও অনেক। ধরুন যে মেয়েটা যৌনকর্মী কিংবা যে মেয়েটা লেসবিয়ান বা ট্রান্সজেন্ডার-সিঁদুরখেলার অধিকার থেকে কিন্তু বঞ্চিত তাঁরাও। কারণ এ সমাজের চোখে ওঁরা অপরাধী। একজনের অপরাধ সে মেয়ে হয়ে আরেকটি মেয়েকে ভালোবেসেছে। আরেকজন তো নিজের পরিচয়টাই বদলে ফেলেছেন। আর আরেকজন? ওরে বাবা সে তো নষ্ট মেয়ে। অতএব সমাজের নিয়মে বিধবা, ডিভোর্সি, লেসবিয়ান, রূপান্তরকামী, যৌনকর্মী এঁরা সবাই সিঁদুরখেলা থেকে, সিঁদুরখেলার আনন্দ থেকে বঞ্চিত। লাল রংটাই যেন তাঁদের জীবন থেকে একদম বাদ হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু কেন? কেন এই ভেদাভেদ? এতো বছরে যখন এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি, ভবিষ্যতেও মিলবে এমনটা আশা করা যায় না। কিন্তু এই পুজোয় বোধহয় আর থাকবে না কোনও ভেদাভেদ। এ শহরের চার নারীর হাত ধরেই এ বার আসতে চলেছে বদল। তথাকথিত সভ্য সমাজের সব বেড়াজাল ভেঙে এই পুজোয় সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে সিঁদুরখেলায় মাততে ময়দানে নামছেন ঋতুপর্না সেনগুপ্ত, সোহিনী সেনগুপ্ত, গার্গী রায় চৌধুরী এবং মানবী মুখোপাধ্যায়।
ইতিমধ্যেই ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে একটি ভিডিও। আর সেখানেই অন্ধতার শিকল ভেঙে সবাইকে আকাশে ওড়ার ডাক দিয়েছেন এই চার নারী। ২০১৮ সালের কান লায়ন্স-এও দেখানো হয়েছে এই বিজ্ঞাপন। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের উদ্যোগে তৈরি হওয়া এই প্রয়াস বিদেশের মাটিতে জিতেছে ব্রোঞ্জের পদকও। তবে তিলোত্তমার চার নারীর এই প্রয়াস কি শুধু ভিডিওতেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি সত্যি সত্যিই এ বছরের দুর্গাপুজোয় শহর কলকাতা সাক্ষী হয়ে থাকবে কিছু নতুনের—-সেটাই এখন দেখার।